• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কিভাবে পারেন সাকিব?


মানজুর মোরশেদ
প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৩, ০৮:০০ এএম
কিভাবে পারেন সাকিব?

সাকিব আল-হাসান খেলবেন আর রেকর্ডবুক সচল হবে না, তাই কি হয়? তিনি খেলবেন, তিনি আলোচনায় থাকবেন- আর তার উপাদান যদিও শুধু পারফরমেন্স নয়, মাঠের বাইরেরও থাকে অনেক কিছু! কি ইতিবাচক কি নেতিবাচক সবই যেন হবে তাকে ঘিরে। আর এসব দেখে অবাকই হতে হয়- এত কিছুর পরও মাঠে নামলে এই লোকটা অন্যরকম ক্রিকেট কিভাবে খেলে? এই প্রশ্নটা নিয়ে যারা দিনরাত ঘুরপাক খান তাদেরকে বিভ্রমে রাখাই যেন সাকিবের কর্তব্য!


সেই ধারায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম দেখলো সাকিবের আরও এক অসামান্য এক কীর্তি! প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব। নামের পাশে ২৯৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচটি শুরু করেন তিনি। একে একে ৪ ইংলিশকে ফিরিয়ে স্পর্শ করেন রেকর্ড। সবমিলিয়ে বিশ্বের ১৪তম বোলার ও ষষ্ঠ স্পিনার হিসেবে ৩০০ উইকেটের মাইলফলকে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারটি।


২০২১ সালে মাশরাফির ২৬৯ উইকেট টপকে হয়েছিলেন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। এরপর লড়াইটা শুধুই নিজের সঙ্গে। একের পর এক কীর্তি গড়ে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অনন্য উচ্চতায়। এবার প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পা রাখলেন ৩০০ উইকেট ক্লাবে। ৮ বছর আগে এই চট্টগ্রামেই নিয়েছিলেন দু’শোতম ওয়ানডে উইকেট, সেই একই মাঠে স্পর্শ করলেন পরের ল্যান্ডমার্কটি।
এখন এই সংস্করণে এককভাবে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে সাকিবের দরকার আর মাত্র ২৪ উইকেট। যেখানে ৩২৩ উইকেট নিয়ে শীর্ষে সানাৎ জয়সুরিয়া। আর ৩০৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। দু’জনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে গত, আর তাই সাকিবের সামনে অবারিত মঞ্চ- সামনে শুধুই এগিয়ে যাওয়া। 


পাশাপাশি তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৩০০ উইকেট ও ৬ হাজার রানের ক্লাবে যোগ দিলেন সাকিব। তিনি ছাড়া এই কীর্তি আছে শুধু শহীদ আফ্রিদি ও সনাথ জয়াসুরিয়ার।


সাকিব কিভাবে পারেন সব সামলে পারফরমেন্স দিয়ে জবাব দিতে? এটা কি শুধুই প্রতিভা, নাকি মনোজগতে এমন কিছু শক্তিশালী অস্ত্র নিয়ে বসে থাকেন তিনি- যার প্রয়োগেই ঘটে যায় ২২ গজে দারুণ সব ঘটনা? সাকিবকে যারা চেনেন-জানেন তারা প্রায়শই বলেন- এই ৩৫ বছর বয়সেও নাকি সে দুর্দান্ত ক্রিকেট মনস্ক! ক্রিকেট ছাড়া সে অন্যকিছু যা ভাবে তা হলো- তাঁর পরিবার, ব্যবসা ও ব্রান্ডিং নিয়ে! স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যে ক্রিকেটটা এমনভাবে মিশে আছে তাঁর সাথে যে বাকি কোন কিছুই আর প্রভাবক হয়ে ওঠে না! সে অধিনায়কের সাথে বন্ধুত্বের দ্বন্দ্বই হোক, আর কবে কোন জুয়াড়ির সাথে একটু হাই-হ্যালোর দায়ই হোক- সাকিব নিজের উচ্চতায় বহমান-ধাবমান।


সাকিব আর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ক’বছর খেলবেন? সর্বোচ্চ চার কিংবা পাঁচ বছর? কিন্তু এই সময়ে কি একটি কাপ জিততে পারবে টাইগাররা? বিশ্বাস করার লোক আশেপাশে কম! কিন্তু সবাই জানে সেটি যদি সম্ভব করতে হয়, তবে ঐ সাকিবকেই লাগবে সর্বাগ্রে।এটা সাকিবও জানেন, জানেন সাকিবের বন্ধু- এমনকি সাকিবের শত্রুও। সাকিব ভিনগ্রহের মানুষ মানসিকতায়, বচনে এবং কাজে! আলোচনা-সমালোচনাপ্রিয় বাঙালীর কাছে তা এক বিষয় বটে, তা সে ক্রিকেটপ্রেমী হোক বা না হোক!


সাকিব মাঠে নামবেন, সাফল্য এনে দেবেন এটা দেখতেই অভ্যস্ত দুনিয়াব্যাপী তার গুনমুগ্ধরা। এখন পর্যন্ত যে ৪০১টি আর্ন্তজাতিক ম্যাচে মাঠে নেমেছেন তিনি তার বেশিরভাগেই আছে নানা কীর্তি।গতবছরের অক্টোবরে সাকিবের বিশাল এক ছবির পাশে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার ছোট্ট একটা ছবি টুইটারে পোস্ট করে ক্রিকেট দুনিয়ায় দারুণ সমালোচিত হয়েছিল বিসিবি! তো বিসিবির এই কাণ্ডে বাকি পৃথিবী অবাক হলেও যা হয়েছে তা একরকম প্রতিকীও বটে! সাকিব তো মহামূল্যবানই এদেশের ক্রিকেটে।
 

দলের প্রয়োজনে যে লোক ওয়ান ডাউন থেকে শুরু করে পাঁচ-ছয়ে ব্যাট করতে পারেন, বল হাতে শুরুর ওভার থেকে শেষ ওভারেও হয়ে ওঠেন ত্রাতা- তার কাছে ক্রিকেটটা জীবন-মরণ না হয়ে পারেই না। আর তাই দিনে ম্যাচ খেলে সন্ধ্যা রাতে ব্রান্ডিংয়ের কাজে উপস্থিত হওয়াকে অপরাধের বিষয় বলে তিনি ভাবেনই না! আসলে কে কী বললো তাতে কিছু আসে বা যায়ই না সাকিবের! তিনি বেশ ভালোই বোঝেন কখন জবাবটা দিতে হবে, কখন কোন কথাটা বলতে হবে। আর সবশেষে কখন পারফরমেন্স দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে হবে।



লেখক: স্পোর্টস ইনচার্জ, যমুনা টিভি
 

Link copied!