রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় এগিয়ে গেছেন বলে তিনি নেতৃত্বের উচ্চতায়ও পৌঁছাতে পেরেছেন। তাই নিজ দেশে যেমন তাঁর ভিত্তি গভীর, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বহুগুণ বেড়েছে গ্রহণযোগ্যতা। বলছি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা।
নানা রকমের বৈদেশিক চাপ, নাশকতা আর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র সামাল দিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করলেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল বর্জন করলেও, অন্য ২৮টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই তাঁর দল আওয়ামী লীগ একটানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।
নির্বাচনকে একতরফা না করে, অংশগ্রহণমূলক করার যে বৈদেশিক চাপ ছিল, তা অনায়াসে করে দেখালেন রাজনীতির ম্যাজিশিয়ান শেখ হাসিনা। ছোট, বড় অন্যান্য দলের সঙ্গে নিজ দলের অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশীকেও তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছেন। এ সুযোগে আরও একবার যাচাই করে নিলেন দল ও তাঁকে ঘিরে থাকা অনেক নেতাকে।
পারিবারিকভাবে এতিম হলেও শেখ হাসিনা নিজ দলে রাজনীতির মধ্যমণি, তাতে সন্দেহ নেই। পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচরদের নিয়ে তিনি পথ চলেছেন বহুদূর, এখন তাঁর সহযোগী তরুণরা। তারুণ্য নির্ভর দল নিয়ে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন সুযোগের, সে সুযোগ পেয়েছেন এবং কাজেও লাগিয়েছেন। তাই নিজ দলে রাজনীতির কম্বিং অপারেশনেও সফল হলেন শেখ হাসিনা। আগামীতে হয়ত অতীতের ত্রুটি মোচনের সুযোগও পাবেন।
২০১৪ এবং ২০১৮ সালের দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেক সমালোচনা রয়েছে। রাজনীতির দীর্ঘ বিশ্লেষণ আর পরিবর্তিত পরিস্থিতি সেসব নির্বাচনে ঘটে যাওয়া অনেক বিষয় অকপটে সামনে নিয়ে এসেছিল। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিজয় ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনেও প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া আমলাদের একটি শ্রেণির বিশেষ ভূমিকা ছিল সেই নির্বাচনে। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো এক পর্যায়ে এসে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে সে নির্বাচন বর্জন করে। ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে। জোটের অন্যান্য আসনসহ সবমিলিয়ে সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩৪ আসনে বিজয়ী হয়। বলা যায়, অনেকটা ফাঁকা মাঠে জয় পেয়ে যায় আওয়ামী লীগ। সরকার গঠন করে পরিকল্পনা-মহাপরিকল্পনায় বাস্তবায়ন শুরু হয় অনেক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের। উন্নয়নের এই কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে ধারাবাহিকভাবে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল না করায় সেবারও নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং অংশ না নেওয়া নিয়ে বিএনপি নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্বে ভোগে। এক পর্যায়ে অংশ নিলেও তারা আশানুরূপভাবে সফল হতে পারেনি।
২১ আগস্ট ভয়ংকর গ্রেনেড হামলার বিভীষিকা থেকে বেঁচেফেরা শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও করে দুস্কৃতিকারীরা। কোনো পরিস্থিতিই টলাতে পারল না শেখ হাসিনাকে। এসব নাশকতার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী করে বিএনপি ও জামায়াতকে। পেট্রলবোমা, ভোটকেন্দ্রে আগুন, যানবাহনে আগুন, পুলিশ হত্যাসহ ব্যাপক নাশকতায় প্রাণ ঝরে যায় অনেক মানুষের। নাশকতার আগুনে আমৃত্যু পঙ্গু হয়ে যায় অনেক নিরীহ মানুষ। পুড়ে ছাই হয়ে যায় স্কুল (ভোটকেন্দ্র)। অপরাজনীতির অভিশাপে যাদের জীবন আজও ভরে আছে বিষাদে। অজানা শঙ্কা আর বিপদসঙ্কুল ওই যাত্রাতেও দমে যাননি শেখ হাসিনা। সেই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করে। একটানা তৃতীয়বারের মতো আবারও সরকার গঠন করে দলটি।
এরপর বিচক্ষণ পররাষ্ট্র কৌশলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যে বাংলাদেশ রোল মডেল হয়ে নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ শুরু করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, একের পর এক উন্নয়নের নতুন নতুন মাইলফলক শেখ হাসিনার একটানা ক্ষমতার সমালোচনাকে দুর্বল করে ফেলে। সঙ্গে বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলা করে দক্ষতার সঙ্গে। হাসিনার নেতৃত্বের বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হয় বিশ্বের অনেক জায়ান্ট পলিটিশিয়ান। ধীরে ধীরে রাজনৈতিক মিত্রতার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁর সঙ্গে। শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন ‘আয়রন লেডি’।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে দেশবাসীর মনে ছিল অজানা শঙ্কা। এই শঙ্কা সাধারণ ভোটারদের মন ভারী করে রেখেছিল ২০১৮ সালের জ্বালাও-পোড়াওয়ের সেসব বিভৎস্য দৃশ্যগুলো দিয়ে। আবশেষে সেসব শঙ্কা কেটে গেল। আইরন লেডি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই একটি বড় দল ছাড়াও অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলো। যে নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি হাজারো চাপ আর যড়যন্ত্র ছিল, তা তিনি অনায়াসেই অত্যন্ত মসৃণভাবে সম্পন্ন করলেন। এবারও জয়ী হলেন শেখ হাসিনা। সমালোচনা আর রাজনীতির কালিমামুক্ত হোক আগামীর বাংলাদেশ। স্বার্থক হোক মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতার চেতনা।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, সংবাদ প্রকাশ