• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একজন শেখ হাসিনার জন্য জীবন দেওয়া যায়


এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২২, ০২:৫৪ পিএম
একজন শেখ হাসিনার জন্য জীবন দেওয়া যায়

মন ভালো হয়ে যায়। যখন একজন রাষ্ট্রনায়কের কথা শুনি। ৬ নভেম্বর রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বললেন, দেশের অর্থনীতি এবং মানুষ যেন ভালো থাকে, সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

বঙ্গবন্ধু তনয়ার সত্য বলার অভ্যাস এবং জনমানুষ নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করার বাস্তবতা পরখ করলে চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। কীভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে তিনি সত্যিই এক আলাদা রাজনৈতিক সত্তা, তা প্রমাণ করেন। বাংলাদেশ যখন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছিল, আমরাই এশিয়ার অর্থনৈতিক বিবেচনায় পরবর্তী টাইগার, ঠিক তখন অতিমারি কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খানিকটা বিপদে বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রই, তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অভিভাবক বলেই নির্ভার থাকা যায়। আনন্দে চোখের কোণে জল জানান দেয়, মহান সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশের জন্য শ্রেষ্ঠ মানুষটিকেই দেশের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োগ দিয়েছেন।

দেশের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানে তিনি যে নাছোড়বান্দা, তা প্রমাণিত সত্য। এখন দরকার তাকে কার্যকর সহযোগিতা করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মিশন। যে লক্ষ্য, আমাদের সব শ্রেণির মানুষের ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে। শেখ হাসিনাকে দিয়েই আমরা উন্নত দেশের অধিবাসী হতে পারব।

এদিকে বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করছে, লোকসমাগম করছে। ঢাকা থেকে গিয়ে বিএনপির গুটিকয় নেতা বক্তব্য দিচ্ছেন। এটিকে তারা আন্দোলন বলছেন, গণজোয়ার বলছেন। কিন্তু এই কথিত আন্দোলনের মাধ্যমে তারা যে দাবিগুলো তুলছে, সেগুলো এক জায়গায় করলে দাঁড়ায়—খালেদা জিয়ার মুক্তি চান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান, শেখ হাসিনার পতন চান। এ না হলে তারা নির্বাচনে যাবেন না।

খালেদা জিয়া যদি সত্যিকার অর্থে নির্দোষ হন, তাহলে তিনি আইনি লড়াই করুক। খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে গেছেন। আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এখানে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনো দায় নেই। কারণ, বিচার বিভাগ স্বাধীন। আর বিচার বিভাগ স্বাধীন বলেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীও পার পাননি। সুতরাং খালেদা জিয়ার মুক্তি কেবল আইনি বন্দোবস্তের মাধ্যমেই সম্ভব। দ্বিতীয় বিষয় হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যব্স্থা ফিরিয়ে আনার দাবি।

বিশ্বের অনেক দেশেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। আমি মনে করি, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়টি একটি বৈশ্বিক চিন্তাভাবনার ফসল। বিশ্ব যখন এগিয়ে চলছে সমানতালে, তখন আমরা পিছিয়ে কেন থাকব?

ভারতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে, বিলেতেও হচ্ছে, আমেরিকাতে হচ্ছে। সরকার ও দলের মধ্যকার পার্থক্য নিরূপণ করার সামর্থ্য থাকতে হবে। সরকার ও দলকে গুলিয়ে ফেললে তো চলবে না। সরকার শপথ নিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করব, সম-আচরণ করব, পক্ষপাতিত্ব করব না।

নির্বাচনের সময় অন্তত একটি সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার সরকারের মতোই আচরণ করবে। তাদের আচরণ সরকারের কোনো মন্ত্রী হিসেবে হবে না, জনগণকে এই বিশ্বাস করতে হবে। বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার বাস্তবতা নেই। কেননা, এটিও আইনিভাবে মীমাংসিত একটি বিষয়। যদি বিএনপি মনে করে আইন মানি, বিচার মানি, তালগাছটা আমার, তাহলে সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।

বিএনপির আরেকটি দাবি হলো শেখ হাসিনার পতন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। তাকে জনগণ ভোট দিয়েছেন। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন। কে পদত্যাগ করবে, কে করবে না, তার ফয়সালা জনগণ করবে, বিএনপির ভাড়া করা লোকজন করবেন না নিশ্চয়। জনগণ চাইলে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, না চাইলে থাকবেন না। তার ফয়সালা হবে ভোটের মাঠে।

বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, ক্ষমতায় আসবে কীভাবে তারা? জনগণের ভোটে? নাকি চোরাগলি পথে? জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসতে গেলে বিএনপিকে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। গুজব রটানো, ভোট বয়কট, জ্বালাও-পোড়াও করে কখনো বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

বিএনপির আগামী নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সরকারি দল হিসেবে আমার অবস্থান— আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নির্বাচন হোক। কিন্তু কোনো দল যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে আমাদের কিছুই করণীয় নেই।

আমরা স্পষ্ট করেই বলছি, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলেও নির্বাচন যথাসময়ে হবে। শুধু বিএনপি কেন, অন্য কোনো দলের ব্যাপরেও আমাদের এই অবস্থান।

এবার নির্বাচনে না গেলে বিএনপির নিবন্ধন হারানোর বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে। আরও অন্তত পাঁচ বছর বিএনপিকে সংসদ বা ক্ষমতার বাইরে থাকতে হবে। আরও পাঁচ বছর সংসদের বাইরে থাকার চাপ বিএনপি সহ্য করতে পারবে না। তাদের দলই টিকবে না। তাই বিএনপিকে হামলার পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে আসতে হবে।

অতীতে বিএনপি কয়েকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। কখনো ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর কথিত দায়সারা নির্বাচন করে। কখনো জামায়াতের প্রত্যক্ষ, কখনোবা পরোক্ষ সমর্থনে। দলটি ২০১৩ সাল থেকে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সেটিই স্বাভাবিক। তবে ক্ষমতায় আসার এ প্রক্রিয়ায় বিএনপি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং দৈনন্দিন জীবনে উৎপাদন ব্যাহত করার পন্থাই বরাবর বেছে নিয়েছে। এর বাইরে কখনো আবার বিপরীত বা ভিন্নধর্মী আদর্শালম্বী ডজন ডজন দলের সঙ্গে আঁতাতও করেছে দলটি। তবে তাতে সফলকাম হয়নি এখনো।

২০১৩-এর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হলেও, যথার্থ অর্থে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। সামনে নির্বাচন। এ নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত। তাহলে কি তারা ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বয়কট করবে?

গত বছরগুলোয় দলটির প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে বড় ধরনের ধস নেমেছে। নেতৃত্বের অভাব, অনুপযোগী ও অসংগত কৌশল অবলম্বন এবং ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এ ধসের মূল কারণ। লন্ডন থেকে বসে ওহি পাঠাচ্ছে। স্কাইপের মাধ্যমে দল পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে বলে বিএনপির নেতারা ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে দল পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনলাইনে বড়জোর পড়ালেখা হয়, অনলাইনে রাজনীতি করা যায় না।

দলটি কয়েকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। উন্নয়নের লক্ষ্যে ৭০ দশকের খাল কাটা থেকে শুরু করে ২০০১-এর পর বিদ্যুতায়নের মতো প্রকল্পও হাতে নেয়। এতে দেশের উন্নতি কত দূর হয়েছে, তা সবার জানা। বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক মাপকাঠিতে বিশ্ব সংস্থাগুলো প্রদত্ত পরিসংখ্যানে আওয়ামী লীগ আমলে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, জনগণের কাছে আজ আর অজানা নয়। তাই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শাসনামলের সঙ্গে বিএনপি আমলের তুলনা করা স্রেফ হাস্যকর।

আওয়ামী লীগের লড়াইটা কিন্তু শিকড়ের অনেক গভীরে। মানুষের সমান অধিকার, সামাজিক সহাবস্থান, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা উচ্চকিত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সংগ্রামের ইতিহাসকে বড় করে দেখতেই হবে।

অপর দিকে বিএনপি মানেই হাওয়া ভবন, লুটতরাজ, জঙ্গিবাদ সর্বোপরি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপপ্রয়াস। তবে সময় আসুক উপলব্ধির। বিএনপিকে উপলব্ধি করতে হবে ভুল পথে হাঁটলে কখনো গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে না। সুতরাং সঠিক ও সুনির্দিষ্ট পথ বাছাই করা বিএনপির জন্য অত্যাবশ্যক। সে পথ হতে হবে সুষ্ঠু রাজনীতির, ভাড়াটে লোক নয়, দেশপ্রেমিক জনতাকে নিয়েই বিএনপিতে রাজনীতি করতে হবে। তা না হলে ভুলের চোরাবালিতেই নিঃশেষ হবে তাদের ক্ষয়ে যাওয়া প্রাণ।

নির্বাচন কমিশনকেও তাগিদ দিতে হবে, বিএনপি কেন কাউন্সিল ডাকে না। কাউন্সিল হলে তাদের দুই শীর্ষ নেতা পদে থাকতে পারবেন না। উভয়েই দণ্ডিত আসামি। তখন দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ফিরে আসবে। তাদের গ্রহণযোগ্য কিছু নেতাদের ইতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে তারা মূলধারায় ফিরতে পারবে। এখন যেভাবে তারা নাশকতার মাধ্যমে চলতে চায়, তা তাদেরকে কানাডার আদালত কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই একদিন ইতিহাসে দেখা হবে, লেখা হবে।

বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে, একটা মাত্র মানুষ যদি রাজনীতির প্রয়োজনে থাকার দরকার হয়, সে নামটা শেখ হাসিনা। তাকে ছাড়া ভালো সিদ্ধান্ত হয় না, ভালো কিছুর জন্ম হয় না। তার প্রতিই মানুষের আস্থা। কথায় কথায় ফ্যাসিস্ট বলে যারা গালমন্দ করেন, আপনারা চেহারাটা আয়নায় দেখুন। আপনাদের জন্মই হয়েছে এমন এক ফ্যাসিস্ট সত্তার আয়নাঘরে, সেসব দর্পণে আপনারা দৃষ্টি রাখলেই দেখতে পাবেন, কতটা বীভৎস, পাষণ্ড হয়ে নিজেদের হালুয়া রুটির বন্দোবস্তে থেকেছেন। মানুষের জন্য নয়। নীতি কথা বলার জন্য মুখ থাকতে হয়। সবার মুখ থেকেও থাকে না। শেখ হাসিনা যখন বলেন, আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তখন মানুষ তাকে ধারণ করে, বিশ্বাস করে। একজন শেখ হাসিনার জন্য জীবন দেওয়া যায় ও যাবে।

 

লেখক : সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

Link copied!