• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রোজায় বিদ্যালয়ে ছুটি: বিভ্রান্তি আগেই কাটানো যেত


আফরিদা ইফরাত
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম
রোজায় বিদ্যালয়ে ছুটি: বিভ্রান্তি আগেই কাটানো যেত

রমজানের প্রথম ১০ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় আর প্রথম ১৫ দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। সংগত কারণেই অসন্তোষ বাড়ে। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট রমজানে স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল দিয়ে পবিত্র রমজানের প্রথম ১০ দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম ১৫ দিন চালু রাখার সিদ্ধান্ত দুই মাসের জন্য স্থগিত করেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। যার শুনানি হয় মঙ্গলবার (১২ মার্চ)। অর্থাৎ প্রথম রোজার দিন। এদিন পবিত্র রমজানে বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। অর্থাৎ রমজানে স্কুল বন্ধ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকছে।

কিন্তু এর মধ্যেই বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। কারণ, সোমবার পর্যন্তও জানা ছিল না প্রথম রোজার দিন স্কুল বন্ধ থাকবে না খোলা। যদিও রাজধানীর অনেক বিদ্যালয় শুধু মঙ্গলবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু তাতেও বিভ্রান্তি কাটেনি। কারণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্যালয় বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা পড়েছেন বেকায়দায়। অভিভাবকদের অসন্তোষও বেড়েছে। তবে আলোচনার বিষয় সেটি নয়। একদম শেষ মুহূর্তে এসে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগা জটিল। বিশেষত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি স্পর্শকাতর।

স্পর্শকাতর শব্দটির ব্যবহার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেশি ব্যবহারযোগ্য। এই সময়ে শিক্ষার্থীদের পরিচর্যা করা জরুরি। আর পরিচর্যার একটি বড় অংশজুড়ে থাকে শিক্ষার্থীদের খাপ খাওয়ানোর বিষয়টি। একজন শিক্ষার্থী যদি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে, তাহলে তার সঙ্গে অভিভাবকের কাজের সম্পর্কও জুড়ে যায়। বিশেষত মায়েদের কষ্ট বাড়ে। এবার রমজানে বেশ গরম পড়বে বোঝা যাচ্ছে। আমরা এর কিছুটা আভাসও পেয়েছি। কিন্তু প্রসঙ্গ সেটিও নয়। গরমের সময় কি বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে? অস্বাভাবিক গরম কিংবা শীত পড়লে স্কুল বন্ধ রাখা যায়। বিষয়টি দোষণীয় তো নয়ই, বিরল ঘটনাও নয়। রমজানের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক। রমজানে সচরাচর কর্মঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হয়। আর কর্মঘণ্টা এগোনোর বিষয়টিতে বাদ পড়তে পারে সংবাদমাধ্যম কিংবা গণমাধ্যম। এই বিশেষ সেক্টর বাদ দিলে থাকে শিক্ষাক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ও সচরাচর রমজানে ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় ভাবনায় রাখে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্কুল নয়। স্কুলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত ছাড়া তারা কোনো কিছু করতে পারে না। তাদের নির্ভর করতেই হয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে শেষ মুহূর্তেও যদি দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবস্থান পাওয়া যায়, তাহলে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

সমস্যাটি প্রতিষ্ঠানগত। সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশের কোনো কপি এখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সোমবার পর্যন্ত পৌঁছায়নি। বিষয়টি শুধু আদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ফরমালিটিতে আটকে গেছে। তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও কাজ করা যেত। প্রজ্ঞাপন ভালোভাবে জারি করার আগে সাময়িক নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারত। এভাবে অন্তত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা স্বস্তি পেত। রমজানে কর্মঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়। তবে অভিভাবকদের মধ্যে অর্থাৎ মায়েদের তো কর্মঘণ্টা অমন না। যারা কাজ করেন তাদেরও এক ঘণ্টা আগেই যেতে হবে। ফলে শিক্ষার্থী বা সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার একটি বাড়তি ঝামেলা তৈরি হয়। নারীকে ঘরে ইফতার প্রস্তুত করতে হয়, রাতের খাবার এমনকি সাহ্রির প্রস্তুতিও রাখতে হয়। প্রচণ্ড গরমে যাতায়াতও একটি বড় ঝামেলা। ফলে রমজানের আগে থেকেই নির্দেশনা দিয়ে রাখা উচিত।

গত বছর রমজানে স্কুল বন্ধ ছিল। এ বছর তেমনটি দেখা যায়নি। যেন প্রতিষ্ঠান নিজেও এভাবে ভাবেনি। এমনটি অবশ্যই কাম্য নয়। বরং এমনটি ভোগান্তি বাড়ায়। রমজানে নানা সময়ে বাজারে অস্থিতিশীলতা এমনকি নানা খাতে সমস্যা দেখা দেয়। শিক্ষা খাতে এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব অবশ্যই ঠিক নয়। একদম শেষ মুহূর্তে এসে দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকটা মাসের শেষে পকেট খালি অবস্থার মতো দুর্দশার কথা মনে করিয়ে দেয়। দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করার অনেক প্রাতিষ্ঠানিক কায়দা রয়েছে। আমরা সে পথে হাঁটছি না কেন? শিক্ষাব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এটিও কি বড় খুঁত নয়?

লেখক : সাংবাদিক

Link copied!