কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার পতনের পর সারা দেশে সাধারণ মানুষের জনজীবন স্বাভাবিক করতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে কাজ করছেন। কেউ রাস্তার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছেন, কেউ বিভিন্ন দেয়াল পরিষ্কার করে সেখানে ছবি এঁকে সৌন্দর্য বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, কেউ কেউ থানা হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় পরিষ্কার করছেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার নেমেছেন সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে।
গত ৫ আগস্ট হাসিনার দেশত্যাগের পর বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন থানা ও আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এসময় নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কর্ম বিরতি দিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। রাস্তাঘাট-অফিস আদালতসহ সারা দেশ স্থবির হয়ে পড়ে।
গত কয়েক দিন ধরে খেয়াল করছি, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় সিগন্যালের পাশাপাশি তারা ফুটপাতে হাঁটা, নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়িতে ওঠানামা ও গণপরিবহনগুলোকে নির্দিষ্ট স্থানে থামার নির্দেশনা দিচ্ছেন। নিয়ম মেনে চলতে মানুষ ও গাড়িচালকদের বাধ্য করছেন।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে আমার পরিচিত এলাকার কয়েকজন ছোট ভাইকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দেখে তাদের সঙ্গে কথা বলি। তারা জানায়, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তারা মানুষকে নিয়ম-শৃঙ্খলা শেখাচ্ছে। পাশাপাশি যানজট যেন না বাঁধে, সেই চেষ্টা করছে। বাস, সিএনজি, প্রাইভেটকার আলাদা আলাদা লাইনে চলাচল করতেও নির্দেশনা দিচ্ছে তারা। কেউ নিয়ম ভাঙলে তাদের সাজা হিসেবে কিছু সময় আটকে রাখছে।
কথা শেষ করে কারওয়ান বাজার অফিসের দিকে রওনা হই। পুরো রাস্তায় শিক্ষার্থীদের সমাগম। সবাই ব্যস্ত সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে। তবে তাদের এই কর্মকাণ্ডে মোহাম্মদপুর থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত কোথায় কোনো বিশৃঙ্খলা দেখিনি। বরং সুশৃঙ্খলভাবে পূর্বের তুলনায় কিছুটা আগেই অফিসে পৌঁছেছি। বিষয়টা এমন যেন, ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াই যানবাহন একটা নিয়মের মধ্যে চলছে।
যদিও রাস্তায় বাস দাঁড়ালে চালকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেওয়ার একটা অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই রয়েছে। আর শিক্ষার্থীরা যেহেতু ঘুষ খান না, তাই কোনো বাস এখন আর যেখানে সেখানে দাঁড়াতেও পারে না। যে কারণে যানজটও কমে গেছে। জরুরি সেবার গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কের একটা পাশ খালি রাখা হয়েছে। অন্য যানবাহনও চলছে নিয়মমাফিক। কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের নির্দেশনায় কত সুন্দরভাবে সবকিছু চলছে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা চাই এই প্র্যাকটিসটা অব্যাহত থাকুক। শিক্ষার্থীরা যে নিয়ম শেখাচ্ছে সেটা সবাই মেনে চলুক। তাদের প্রচেষ্টায় সড়কে যে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে কারও দায়িত্বহীনতায় সেটা নষ্ট না হোক।
লেখক : রাসেল হোসাইন, গণমাধ্যমকর্মী