• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৯/১১-এর পর কোন পথে আফগানিস্তান?


মাহফুজুর রহমান
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ০৭:৩৪ পিএম
৯/১১-এর পর কোন পথে আফগানিস্তান?

সংখ্যা দিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি হয়তো বিচার করা যাবে না। কিন্তু গত দুই যুগ ধরে ৯/১১ সংখ্যাটি বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম বড় নিয়ন্তা ছিল। নিউইয়র্ক থেকে কাবুল পর্যন্ত কেবল না, ৯/১১ এর তাৎপর্য বিশ্ব রাজনীতির টেবিলকে নিয়ত উত্তপ্ত রেখেছিল। এত উত্তাপ ছড়িয়েও ৯/১১-এর বিশ বছর পূর্তিটা এখনো প্রশ্নবোধক চিহ্ণই রেখে যাচ্ছে।

যে ৯/১১-এর জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ৫১টি দেশের কোয়ালিশন বাহিনী আফগানিস্তান দখল করে বিশ বছর ধরে সেখানে তাদের পছন্দমতো সরকার ও শাসনব্যবস্থা চালু রেখেছিল, বিশ বছর পর কোনো উপসংহার ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে দখলদার বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়েছে। ছাড়ার সময় তাদের অপরিণামদর্শিতায় তাদের পছন্দমতো গড়ে তোলা আফগান সরকারকেও নিয়ে চলে গেছে। ফিরে এসেছে তালেবান শাসন।

বিশ বছর লম্বা সময়। আফগানদের গড় বয়স উনিশ। দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার জন্ম ২০০১-এর পরে। এরা বিদেশি শাসনই দেখেছে। বিশ বছরে বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে আফগান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ছিল না বললেই চলে। দখলদারদেরও খুব আগ্রহ ছিল না আফগান জাতীয়তা বিকাশের। যা ছিল তা একদিকে সন্ত্রাসবিরোধী প্রপাগান্ডা, অন্যদিকে মৌলবাদী ইসলামিক ধর্মীয় উন্মাদনা। শিশু-কিশোরদের মধ্যে যারা শহরকেন্দ্রিক ছিল, তারা বেড়ে উঠেছে ক্রিকেট আর ইন্টারনেটের মধ্যে। আর অন্যরা বেড়ে উঠেছে শরণার্থী শিবির বা মাদ্রাসায়, দুর্গম পার্বত্য এলাকায়, হয়তো রাইফেলের সঙ্গে।

সাড়ে তিন কোটি মানুষের দেশ আফগানিস্তান। তালেবানদের কাবুল দখলের দেড় মাসের মাথায় এখন তেত্রিশ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। মন্ত্রিসভাটি অস্থায়ী। অস্থায়ী হতেই হতো কেননা তালেবানরা ক্ষমতা দখল করেছে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর সমর্থনে ‘নির্বাচিত’ আফগান সরকার ২০০৪ সালে আফগানিস্তানকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সংবিধান রচনা করেছিল। তালেবানরা বহু আগেই এই সংবিধানকে বর্জন করেছে। যদিও কোন ধরনের সংবিধান তারা চায়, সে সম্পর্কে কখনো কিছু বলেনি। কেবল বলেছে, আফগানিস্তানে তারা ইসলামিক আমিরাত প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

আমিরাত প্রতিষ্ঠা করতে হলে ‘আমির’ প্রয়োজন। এই আমির বংশানুক্রমে নির্বাচিত হতে থাকবে। এ রকম ব্যবস্থা কাতার, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে। তালেবানদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বংশের ধারা মেনে নেওয়া। এই মুহূর্তে আমিরের দায়িত্ব নিয়েছেন মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। তিনি আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ভার নেওয়া তালেবান গোষ্ঠীর আমিরুল মোমেনিন। আমিরুল মোমেনিন আরবি শব্দ, যার অর্থ বিশ্বাসীদের নেতা। অর্থাৎ তালেবানদের যদি একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দল হিসেবে গ্রহণ করি, তবে তিনি সেই দলের সর্বোচ্চ নেতা। এই পদে তিনি আসীন হন ২০১৬-তে যখন তালেবান নেতা মোল্লা আখতার মোহাম্মদ মনসুর যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন।

মোল্লা আখতার মনসুর বেশি দিন তালেবানের শীর্ষ নেতা ছিলেন না। ২০১৫ সালে কেবল তিনি এই পদে নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯৪ সালে তালেবানের প্রতিষ্ঠাকাল হতে ২০১৩-তে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদ তালেবানের শীর্ষ নেতা ছিলেন। তার আধিপত্য এতটা প্রভাববিস্তারী ছিল যে তার মৃত্যুর পর অন্তত দুবছর তালেবানরা তা প্রকাশও করেনি, বিকল্প নেতাও নির্বাচিত করেনি।

ইসলামিক আমিরাত নির্ধারিত হলে প্রশ্ন হলো আমিরের বিষয়টি ফায়সালা হবে কীভাবে? হিবাতুল্লাহের মৃত্যু হলে কি তার সন্তানদের কেউ আমির হবে! তালেবানদের কাছে বিষয়টি এমন না-ও হতে পারে। ২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও তালেবানরা ইসলামিক আমিরাত বিলুপ্ত করেনি। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত মোল্লা ওমর আফগানিস্তানের আমির হিসেবে বহাল ছিলেন। কিন্তু মারা যাওয়ার পর তাঁর সন্তান মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবকে তালেবানরা নতুন আমির হিসেবে গ্রহণ করেনি। বরং দলের হায়ারারকি অনুসরণ করে আখতার মনসুরকে আমির ঘোষণা করেছে। আখতার মনসুরের মৃত্যু হলে একইভাবে হায়ারারকি অনুসরণ করে হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে আমির হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

আমরা কি তাহলে নতুন ধরনের আমিরাত দেখব! যেখানে রক্তের সম্পর্ক না, বরং দলীয় হায়ারারকি দিয়ে আমির নির্বাচিত হবেন! ১৯৯৬ সালে তালেবানরা ক্ষমতায় থাকাকালে লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেনি। আইনের ভিত্তি হিসেবে সর্বদা শরিয়ার কথা বলা হচ্ছে। এখনো কি তবে তালেবানরা সংবিধান ছাড়া দেশ শাসন করতে থাকবে!

বিশ বছরে তালেবানদের মধ্যে পরিবর্তন আশা করা হচ্ছিল। এই তালেবানকে দ্বিতীয় প্রজন্ম তালেবান ভাবা হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক কোয়ালিশনের এমন উড়ে এসে জুড়ে বসা যারা সমর্থন করতে পারেননি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থান শেষ হওয়ার আগেই দ্রুত তালেবানদের কাবুল দখলের নাটকীয়তার মধ্যে হতদরিদ্র পশ্চাৎপদ একটা জাতিগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন খুঁজতে সচেষ্ট ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের সঙ্গে প্রাক-প্রস্থান আলোচনায় অন্যান্য শরিক বিশেষ করে আফগান সরকারকে অন্তর্ভুক্ত না করে যেমন এককেন্দ্রিক দম্ভ প্রকাশ করেছে, তালেবানরাও তেমনি কেবল কট্টর তালেবানদের দিয়ে সরকার গঠন করে সেই রকম দম্ভ প্রকাশ করেছে।

অনেকে তালেবানদের পেছনে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের স্পষ্ট ছায়া দেখেন। তাদের মতে, যেহেতু বিশ বছরে গোয়েন্দা সংস্থার চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি, সে জন্য তালেবানদেরও পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। যদি তালেবানরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সুযোগ পেত, তবে হয়তো কিছুটা দায়িত্বশীল ও মানবিক আচরণ আশা করা যেত। কিন্তু তাদের চিন্তা এবং আচরণ পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ন্ত্রিত।

কেন তবে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তালেবানদের মতো পশ্চাৎপদ একটি গোষ্ঠীর এত প্রয়োজন? উত্তরটায় ইতিহাস ও রাজনীতির নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। ১৯৪৭ সালের পর যখন পাকিস্তান প্রশাসন বুঝতে পারে যে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তার উন্মেষ ঘটছে, তখন তা পরাহত করতে তারা যেমন বাঙালির মধ্যে মুসলমান সত্তাটিকে সামনে নিয়ে আসতে সচেষ্ট ছিল, পশতুনদের মধ্যেও তেমনি তারা আফগান সত্তাটির বদলে মুসলমান সত্তাটিকে উসকে দিতে থাকে। ১৯৭১-এর পরাজয়ের শিক্ষা সম্ভবত তাদের এক কাঠি এগিয়ে মুসলমান সত্তাটির মধ্যে কট্টর, জঙ্গি ও মৌলবাদী উপাদান মেশাতে প্রবৃত্ত করেছে।

কেন? কারণ আফগানিস্তানে পশতুন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দেড় কোটির মতো হলেও পাকিস্তানে পশতুন জনগোষ্ঠী চার কোটির ওপর। পাকিস্তানি পশতুনদের মধ্যে কিছুটা হলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী আচরণ রয়েছে। সে জন্য পশতুন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা পশতুন জাতিসত্তার বিকাশ, তা সীমান্তের ওপারে হলেও পাকিস্তান অংশে যেকোনো সময় তার ঢেউ লাগতে পারে। সীমান্ত গান্ধী বলে খ্যাত খান আবদুল গাফফার খান আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অংশ নিয়ে স্বাধীন পাখতুনিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলেন। পাখতুনিস্তান অন্যান্য নামেও পরিচিত, যেমন – পাখতুনখোয়া, পাঠানিস্তান, পশতুনিস্তান বা এমনকি আফগানিস্তান। একসময় পাখতুনিস্তানের অস্তিত্ব ছিল। ব্রিটিশরা এসে যত ঝামেলা বাধায়। তাদের আগ্রাসনে পাখতুনিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়। ডুরান্ড মহোদয় লাইন টেনে পাখতুনিস্তানের একাংশ ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে আনেন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমানা এখনো বিতর্কিত ডুরান্ড লাইন দিয়ে বিভক্ত।

তেত্রিশ সদস্যের মন্ত্রিসভায় তিরিশজনই পশতুন। প্রধানমন্ত্রীসহ চৌদ্দজনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বা জাতিসংঘে কোনো না কোনোরকম অনুজ্ঞা রয়েছে। পশ্চিমারা আশা করেছিলেন, তালেবানদের যে সমস্ত নেতা এই বিশ বছরে প্রকাশ্য ছিলেন, বিশেষ করে যারা দোহা আলোচনায় সক্রিয় ছিলেন, মন্ত্রিসভায় তারা প্রাধান্য পাবেন। তাদেরকে বলা হচ্ছিল নতুন প্রজন্মের তালেবান। কিন্তু মন্ত্রিসভা সজ্জিত হয়েছে একেবারে গোঁড়া তালেবান নেতাদের দিয়ে। যদিও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে মন্ত্রিসভাটি অস্থায়ী এবং এতে যোগবিয়োগ হতে পারে। কিন্তু একটা ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়েছে যে উনিশ-বিশ ছাড়া চরিত্রগত কোনো পরিবর্তনের আপাত সম্ভাবনা নেই।

বিশ বছরে আশা করি তালেবানদের মধ্যে এইটুকু শিক্ষা নিশ্চয়ই হয়েছে যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই যুগে দেশ চালনা অসম্ভব। আফগানিস্তানের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ৫০০ ডলারের মতো। ২০০১ সালে তা ছিল অর্ধেকেরও কম। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংকে রাখা ১০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের ভবিষ্যৎ এখন শেয়ালের কাছে রাখা মুরগির মতো। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও সম্প্রতি আফগানিস্তানের ৪৫০ মিলিয়ন ডলার স্থগিত করে দিয়েছে। পশ্চিমা দাতা দেশগুলো স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক প্রকল্পগুলো হয় বন্ধ করে দেবে, নয় তালেবান সরকারই সেগুলোর নিকুচি করবে। মাথাপিছু বর্ধিত আয়ের অনেকাংশই ছিল প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত ব্যয়–হয় সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়, নয় সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ। সেগুলোর এখন আর সুযোগ নেই। দাতা দেশগুলোর প্রকল্প অনুদানের সিংহভাগ ছিল শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও বিদেশি প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত। তালেবান শাসনে এইগুলোরও যে আর কোনো জায়গা নেই তা বলাই বাহুল্য।

পশ্চিমা সহায়তায় তৈরি অনেক অবকাঠামো এখন বন্ধ হয়ে যাবে। হয় অর্থের অভাবে, নয় পশ্চিমাদের অসহযোগিতায়। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে। বিদ্যুতের অভাবে ইন্টারনেট কাজ করবে না। শহরবাসী, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এতে সবচে বেশি অসন্তুষ্ট হবে। সাড়ে তিন কোটি মানুষকে খাওয়ানোও বড় চ্যালেঞ্জ। আফগানিস্তানে কৃষিযোগ্য ভূমি মাত্র পাঁচ ভাগ। সেচ ব্যবস্থা যুক্ত করতে পারলে আবাদযোগ্য জমি বাড়বে। কিন্তু সেচ ব্যবস্থার বড় অংশ নির্ভরশীল বিদ্যুতের ওপর।

চীন ও পাকিস্তানের কাছ থেকে কিছু পরিমাণ সাহায্য হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু পাকিস্তানের নিজেরই সামর্থ্য সীমিত। তার ওপর আফগানদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভের অধিকাংশই পাকিস্তানবিরোধী। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়তে পারে। পাকিস্তানে বসবাসরত আফগান শরণার্থীদের এখন স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রেও পাকিস্তান ঝামেলার মুখোমুখি হবে। পাকিস্তানি তালেবান যারা তেহরিক-ই-পাকিস্তান নামে সক্রিয়, তাদের জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যেতে পারে। চীনের উপস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তান আশানুরূপ সহায়তা না-ও পেতে পারে। এতে বলির পাঁঠা হবে আফগানিস্তান।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, যেমন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা, জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্প, বিশ্বব্যাংক, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা–সবগুলোই পশ্চিমা দেশগুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তালেবান শাসন চলার কারণে অল্প পরিমাণ বা স্বল্পমেয়াদি সাহায্য ছাড়া এগুলোর কাছ থেকে বড় ধরনের সহায়তা পাওয়া দুরূহ হবে। তালেবান সরকারের বৈধতা স্বীকৃত না হলে সমস্যা আরও বাড়বে। ১৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের এক্রিডিটেশন কমিটির বৈঠক হবে। এখনো জানা যায়নি জাতিসংঘে আফগান স্থায়ী প্রতিনিধি কোন সরকারের পক্ষ নেবে। হয়তো এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আফগানিস্তানের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। তালেবান সরকার এ ক্ষেত্রে অবশ্য পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভর করে থাকবে।   

ভয় হলো, তালেবানরা যেমন দ্রুত কাবুল দখল করেছে, সম্ভবত এরচেয়ে দ্রুত শেষ হয়ে যাবে তাদের মধুচন্দ্রিমা। ছোট ছোট জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে এখন শহুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত, বিশ বছরে তৈরি বেনিফিশিয়ারি সামাজিক গোষ্ঠী, যুবক ও নারী যারা আগের চেয়ে বেশি অধিকার সচেতন, আগের চেয়ে বেশি ভোগবাদী– তালেবানদের চ্যালেঞ্জ সে জন্য বহুবিধ। ২০২১ সালে একটা দেশের বড় সম্পদ ভালো ব্র্যান্ডিং। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আফগানিস্তান এখানে এমনিতেই পিছিয়ে আছে। তালেবানি শাসন তাদের দিতে পারে অকার্যকর রাষ্ট্রের ব্র্যান্ডিং বা তকমা।

তবে এসবই অনুমান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আঞ্চলিক শক্তিগুলো যদি সহায়ক ভূমিকা নেয়, অন্তত মানবিক কারণে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখে, তবে তালেবান সরকার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠবে। সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যার কথা চিন্তা করে হলেও পশ্চিমা দেশগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত, কেননা আফগানিস্তানের এই দুর্দশার পেছনে তাদেরও ভূমিকা আছে। আর তালেবানরাও যদি নিজ দেশের জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল হয়, যদি দেশ ও জনগণের কল্যাণকে তাদের আমানত মনে করে, তবে শরিয়াভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যেও কিছু মাত্রায় সুশাসন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র, উন্নয়ন– সব সূচকেই প্রায় তলানিতে থাকা দেশটির ওপরে ওঠা ছাড়া নতুন খবর আর কিছু হতে পারে না।         

 

লেখক: সাবেক রাষ্ট্রদূত

Link copied!