• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেন ওয়ার্ন নেই, পড়ে আছে তাঁর রাজমুকুট


অঘোর মন্ডল
প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২২, ০১:৩৭ পিএম
শেন ওয়ার্ন নেই, পড়ে আছে তাঁর রাজমুকুট

শূন্যতা আর বিষণ্নতায় মোড়ানো ক্রিকেট বিশ্বে উচ্চারিত হচ্ছে নামটা। শেন ওয়ার্ন। শূন্যতার মধ্যে অবিশ্বাসের দীর্ঘশ্বাস ফেলছে ক্রিকেটমহল! কারণ, শেন ওয়ার্ন আর নেই! বিষণ্নতার ভাঙা টুকরা পাশে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে তাঁর মহাকীর্তি নিয়ে।

শেন ওয়ার্ন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। কারও কাছে তর্কহীনভাবে সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার। গত শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি বেরিয়ে এসেছিল তাঁর হাত থেকে। যে বলের রহস্য মাইক গ্যাটিং আজ অবধি খুঁজে পাননি। যাঁর নামের পাশে ১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট ২০.৪ গড়ে। আর ১৯৪ ওয়ানডেতে ২৯৩ উইকেট। ’৯৯-এর বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া দলের উজ্জ্বল মুখও তিনি। ম্যান অব দ্য ফাইনালের পুরস্কারও উঠেছিল তাঁর হাতে। কিন্তু এসব সংখ্যা জড়ো করে কি একজন শেন কিথ ওয়ার্নকে মাপা যাবে! তাঁকে বোঝা যাবে! কিংবা বোঝানো যাবে!

শেন ওয়ার্ন—জিনিয়াস। ওই পর্যন্ত বলার পর ক্রিকেট বিশ্বের বড় বড় বিশ্লেষককেও থামতে হয়েছে। কারণ, জিনিয়াসের সংজ্ঞা পাটিগণিত দিয়ে হয় না। ক্রিকেটার ওয়ার্নকেও উইকেট দিয়ে বোঝার চেষ্টা না করা ভালো। ওয়ার্নের মৃত্যুর খবরে শোকের সুনামি ক্রিকেট-গ্রহে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও যার ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ফেসবুক, টুইটারে মানুষের ওয়ালে ওয়ালে ভাসছে ওয়ার্নের জন্য শোকগাথা। আর ভাসবে না কেন, ওয়ার্ন হচ্ছেন লেগ স্পিনের এক মহাজাগতিক বিস্ময়! আর মৃত্যুতেও থেকে গেল অবিশ্বাস আর বিস্ময়। জীবনের বাইশ গজে তাঁর নামের পাশে মাত্র ৫২! বিশ্বাস করার মতো সংখ্যা এটা?

অবিশ্বাসের রেশটা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ক্রিকেট বিশ্ব ওয়ার্নের মৃত্যু নিয়ে। জীবন একটাই। জীবনের মধ্যেই যিনি থাকতে ভালোবাসতেন সব সময়। তাঁর জীবন এত ছোট হবে, ভাবা যায়!  এক দিন আগেও কি কেউ ভেবেছিলেন তাঁর জীবনের গল্প এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে যিনি অস্ট্রেলিয়ার আরেক কিংবদন্তি রডনি মার্শের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করেছিলেন। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তিনিই কিনা চলে গেলেন স্মৃতির ওপারে। ক্রিকেটার, সংগঠক, মিডিয়া, দর্শক সবাই তাঁর স্মৃতিচারণা করছেন। এবং সেটা অসীম স্তব্ধতাকে বুকে নিয়ে।

ক্রিকেট ওয়ার্নকে সব দিয়েছিল। যশ-খ্যাতি-অর্থ-সম্পদ-ভোগ-বিলাস—সবই। সঙ্গে বিতর্ক-সমালোচনা কি ছিল না। গত শতাব্দীর শেষ আর এই শতাব্দীর শুরুতে ওয়ার্ন ছিলেন ব্যাটসম্যানদের কাছে এক দুঃস্বপ্নের নাম। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন কত বালক, কিশোর, তরুণের কাছে এক স্বপ্নের নাম। যাদের রক্তের গ্রুপ ক্রিকেট। আর ডিএনএতে লেগ স্পিন। ক্রিকেটের কঠিনতম শিল্পের শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তারা ওয়ার্নের কবজির মোচড়, হেয়ার স্টাইল আর এক একটা উইকেট তুলে নেওয়ার পর সেই বুনো উল্লাস দেখে।

আর তাই ওয়ার্নের মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর চট্টগ্রামের এক যুবক তার ফেসবুক ওয়ালে ইংরেজিতে যা লিখেছেন, তার বাংলা সারমর্ম দাঁড়ায়—‘ওয়ার্নের মৃত্যু মানে কত স্বপ্নের মৃত্যু! আমার মতো এক যুবকও ওয়ার্ন হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে কত দুপুর, কত বিকেল পার করেছি গলির ক্রিকেটেও! পরে বুঝেছি ওয়ার্নের মতো হ্ওয়া যায় না।’ আসলেই তাই। শেন ওয়ার্ন হ্ওয়া যায় না। ক্রিকেট-ঈশ্বর তাদের ক্রিকেটালোকে পাঠান।

শেন ওয়ার্ন চলে গেলেন। পড়ে রইল তাঁর লেগ স্পিনের মহাকীর্তির রাজমুকুট।

Link copied!