• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুমিনুল দলকে ত্রাণ হিসেবে কিছু রান দিন


অঘোর মন্ডল
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২, ০২:৫৬ পিএম
মুমিনুল দলকে ত্রাণ হিসেবে কিছু রান দিন

বন্যার পানির মতো ধেয়ে আসা ব্যর্থতা তার ব্যাটে! ইদানীং তার টেস্ট রানগুলো দেখলে মনে হবে পিন কোড! শেষ ছয় ইনিংসে মুমিনুলের রান ৪, ০, ২, ৬, ৫, ২, ৯! নিজের এই ব্যাটিং ব্যর্থতাকে সামাল দিতে সঠিক বাঁধ দেওয়া দরকার। না হলে তার ক্যারিয়ার ভেসে যেতে পারে আরও দূরে। অনিশ্চিত কোনো গন্তব্যে।

মুমিনুলের ক্যারিয়ার বাঁচাতে আপাতত একটাই পথ খোলা। ব্যাট হাতে রান করা। টেস্টে বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যাটার তিনি। কিন্তু সেই মুমিনুলের ব্যাটে এই দুরবস্থা কেন? অধিনায়কত্বের বোঝা! সেটা তো নিজেই কাঁধ থেকে নামিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ব্যর্থতার কিনার থেকে নিজেকে টেনে তুলতে পারছেন না কেন?

বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা আর অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের আপাতত সমস্যা কোথায়? টেকনিক! টেম্পারমেন্ট নাকি অন্য কিছু? ফর্মহীন মুমিনুলকে ফর্মে ফেরাতে অনেক রকম প্রেসক্রিপশন দেখা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, তাকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, মুমিনুল চাইলে বিশ্রাম নিতে পারেন। পরোক্ষভাবে মুমিনুলের ‘বিশ্রামে’ অধিনায়কের অনাপত্তিপত্র। কিন্তু সবার আগে মুমিনুলকেই বলতে হবে তিনি কী চান। বিশ্রাম, নাকি অধিনায়ককে বলবেন: ক্যারিবীয় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে আমি ব্যাট হাতে লড়াই করতে চাই। তার ব্যাটিং-ব্যর্থতা নিয়ে এত আলোচনা, চর্চা, মনে হতে পারে, বাকিরা সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করে চলেছেন! 

তবে হ্যাঁ, অন্যদের দিয়ে মুমিনুলকে যাচাই করা ঠিক হবে না। কারণ, দলের সেরা ব্যাটারের ব্যাটে রানের দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে বন্যার পানিকেও সুপেয় মনে হয়! মুমিনুলের ব্যর্থতা যেভাবে বিজ্ঞাপিত হচ্ছে, অন্যদেরটা সেভাবে হবে না। কারণ, একসময় মুমিনুলের ব্যাট মানে রান। তাই ব্যর্থতাকে প্রত্যাঘাত করে বাইশ গজে আবার রানে ফেরার কাজটা তার।

আধুনিক যুগে ব্যাটিং-ব্যর্থতার কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তা নয়। ভিডিও অ্যানালিস্টের সঙ্গে বসে নিজের ভুলগুলো দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে। ব্যাটিং কোচ আছেন তার কাছে যেতে হবে। কথা বলতে হবে। টিমের বাকি ব্যাটাররা সামনে থেকে দেখছেন গন্ডগোলটা কী হচ্ছে! তারাও সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারেন। অবশ্য তাদেরও যে অবস্থা! ক্রিকেট জীবনে খারাপ সময় সবারই আসে। কেউ কালো সময় মনে করেন। কেউ অভিশপ্ত সময় বলেন। কিন্তু চ্যাম্পিয়নরা এই সময়টাকে পেছনে ফেলে যান। আর ভিতুরা এই সময়টাকে মানসিক বিভীষিকা হিসেবে বয়ে বেড়ান! নিজেকে কোন তালিকায় রাখবেন, সেই সিদ্ধান্ত মুমিনুলকেই নিতে হবে। তবে এ কথাও ঠিক, বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের ভুল-ভ্রান্তি কাটাছেঁড়া করার জন্য কোটি কোটি বিশ্লেষক আছেন!

মুমিনুল রান পাচ্ছেন না কেন? এই প্রশ্নের মুখোমুখি কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকেও দাঁড়াতে হবে। কোচ-অ্যানালিস্ট কেউ মুমিনুলের হয়ে ব্যাট করে দেবেন না। রান করে দেবেন না। যা করার তাকেই করতে হবে। কিন্তু মুমিনুলকে পথটা বাতলে দেওয়ার দায়িত্ব কোচকেও নিতে হবে। আর মুমিনুল যদি নিজেই মনে করেন, তিনি অবসাদগ্রস্ত। তার ব্রেক দরকার। তাহলে দ্বিতীয় চিন্তার কোনো সুযোগ নেই। তাকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত।

তবে হ্যাঁ, ক্রিকেট কয়েদি বা শরণার্থীর মতো করে দলে থাকা একজন সাবেক অধিনায়কে মানায় না। ওভাবে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি দীর্ঘ নির্বাসনে পাঠিয়ে দিতে পারেন কর্তারা। তার আগে গায়ে একটা ট্যাগ এঁটে দিতে পারেন: ‘চলে না’! পৃথিবীর আরেক গোলার্ধে বসে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশ টিমে মুমিনুলের অবস্থা অনেকটা শরণার্থীর মতো! ওই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সাহস দেখাতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। আর ক্রিকেট শরণার্থীশিবির থেকে দলকে ত্রাণ হিসেবে বড় অঙ্কের রান দিতে হবে।

মুমিনুল ক্রিকেটে অনেকে অনেকভাবে ফেরেন। তারপর ক্রিকেট লিখিয়েরা লেখেন: ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়!’ আপনার তো শুধু রানে ফেরা দরকার। একটা বড় রানের ইনিংস। সেই রানের রাস্তাটা আপনাকে খুঁজতে হবে। এটাও ঠিক। আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন! ‘হারিয়ে খুঁজি’-কে আর কঠিন করে ফেলবেন না। বরং সুযোগ পেলে সেন্ট লুসিয়ায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পদযাত্রায় রানের খোঁজে নেমে পড়ুন।

 

লেখক: সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলাম লেখক

Link copied!