• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঐতিহাসিক ৭ জুন এবং ছয় দফা


বাশার খান
প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২, ০৫:১৩ পিএম
ঐতিহাসিক ৭ জুন এবং ছয় দফা

৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের এই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত বাঙালির মুক্তির সনদখ্যাত ছয় দফার প্রতি সমর্থন এবং বঙ্গবন্ধুসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবিতে প্রদেশব্যাপী ডাকা হরতালে তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। হরতাল পালনকালে পুলিশের গুলিতে ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে ১৩ জন নিহত হন। এরপর থেকেই ৭ জুন ছয় দফা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখেন পাকিস্তান আর্মির বাঙালি সদস্যরা। অথচ আইয়ুব খান প্রশাসন যুদ্ধ চলাকালীন ১৭দিন পূর্বপাকিস্তানকে অরক্ষিত রাখে, ব্যস্ত থাকে পশ্চিম পাকিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষায়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যুদ্ধে বাঙালি সেনাদের বীরত্বের প্রশংসা করেন, তীব্র সমালোচনা করেন পূর্ব পাকিস্তানকে অরক্ষিত রাখার আইয়ুব খান নীতির। তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের অবসানের পরও পূর্বপাকিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা সরকার চরম অবহেলা ও উদাসীনতা অব্যাহত রাখে। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোচ্চার হন। পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় নেতারা তাসখন্দ-উত্তর রাজনীতির গতিধারা নিরূপণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করে। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সম্মেলনে যোগ দেন। 

৫ ফেব্রুয়ারি সাবজেক্ট কমিটির সভায় তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দাবি হিসেবে ‘ছয় দফা’ প্রস্তাব পেশ করেন এবং তা সম্মেলনের আলোচ্য সূচির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। কিন্তু সম্মেলনের উদ্যোক্তারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরদিন পশ্চিম পাকিস্তানি সংবাদপত্রে ছয় দফার বিবরণ ছাপিয়ে শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরূপে আখ্যায়িত করা হয়। ফলে শেখ মুজিব ৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন বর্জন করেন। (সিরাজুল ইসলাম সম্পাদিত, বাংলাপিডিয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৫২৭।)  এরপর ঢাকা প্রত্যাবর্তনকালে ঢাকা বিমানবন্দরে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরে শেখ মুজিব ঘোষিত এই ছয় দফা বাঙালির মুক্তির সনদে পরিণত হয়। 

সংক্ষেপে ছয় দফার মূল কথা হল, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি আলাদা ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রাদেশিক সরকারের রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকার পাবেন। আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য প্রদেশের আধা-সামরিক বা আঞ্চলিক সামরিক বাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা থাকবে এবং নৌবাহিনীর সদর দপ্তর করাচি থেকে চট্টগ্রামের স্থানান্তর করতে হবে।

পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু সারা পূর্ববাংলায় সফর করে ছয় দফা দাবিকে ছড়িয়ে দেন। সারা দেশে ৩৫দিনে মোট ৩২টি জনসভা করেন তিনি। (সূত্র: তোফায়েল আহমেদ, ছয় দফা: শহিদের রক্তে লেখা শীর্ষক নিবন্ধ, দৈনিক ভোরের কাগজ, ৭ জুন ২০১৭।) জনসভায় প্রদত্ত বক্তৃতায় ছয়-দফার বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বাঙালি জাতির কাছে তুলে ধরেন তিনি। জেলা ও মহকুমায় সভা-সমাবেশ করে পুরো বাঙালি জাতিকে একক নেতৃত্বে এবং এক ছাতার নিচে আনতে সক্ষম হন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুকে রুখতে না পেরে বাধ্য হয়ে ছয় দফা প্রচারকালে ১৯৬৬ সালের ৮ মে নারায়ণগঞ্জ থেকে জনসভা করে ফেরার পর কেন্দ্রীয় নেতাসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তারের পরও বীর বাঙালিকে দমানো যায়নি। বঙ্গবন্ধুসহ দলের শীর্ষনেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয় এ সময়। ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন সারা পূর্ববাংলায় হরতাল আহ্বান করা হয়। হরতালকে বানচাল করার জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলা ও মহকুমায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় অনকে নেতাকর্মীকে। 

ঐতিহাসিক ৭ জুন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ডায়েরি বা দিনলিপিতে। তিনি লেখেন, “২রা জুন ১৯৬৬। বৃহস্পতিবার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনলাম রাত্রে কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে এসেছে। কয়েদিরা, সিপাহিরা আলোচনা করছে। ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। বুঝতে বাকি রইল না আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীদের নিয়ে এসেছে, ৭ জুনের হরতাল বানচাল করার জন্য। ... আবদুল মোমিন এডভোকেট, প্রচার সম্পাদক আওয়ামী লীগ, ওবায়দুর রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, হাফেজ মুছা, ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি, মোস্তফা সরোয়ার, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি, শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, সহসভাপতি, ঢাকা শহর আওয়ামী লীগ, রাশেদ মোশাররফ, সহ সম্পাদক, ঢাকা শহর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ কর্মী হারুনুর রশিদ ও জাকির হোসেন। দশ সেলে এদের রাখা হয়েছে। এত খারাপ সেল ঢাকা জেলে আর নাই।... এই নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য আন্দোলন যে পিছাইয়া যাবে না, সে সম্বন্ধে আমার সন্দেহ নাই। বুঝলাম সকলকেই আনবে জেলে। ধরতে পারলে কাউকেই ছাড়বে না।” (শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, পৃ. ৫৫ ও ৫৬।)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সুদূরপ্রসারী চিন্তার রাজনীতিবিদ। সত্যিই নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে করেও আন্দোলনকে দমাতে পারেনি পাকিস্তানি প্রশাসন। ৭ জুন পুরো পূর্ব পাকিস্তানের সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। ‘নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হওয়ার জন্য আন্দোলন যে পিছাইয়া যাবে না’, বঙ্গবন্ধুর এই ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে ৭ জুন। 

৭ জুনের দিনলিপিতে বঙ্গবন্ধু লেখেন, ‘... ১২টার পর খবর পাকাপাকি পাওয়া গেল যে হরতাল হয়েছে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছে। তারা ছয় দফার সমর্থন করে আর মুক্তি চায়, বাঁচতে চায়, খেতে চায়। ব্যক্তি স্বাধীনতা চায়। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি, কৃষকের বাঁচবার দাবি তারা চায়। এর প্রমাণ এই হরতালের মধ্যে হয়ে গেল। এ খবর শুনলেও আমার মনকে বুঝাতে পারছি না। একবার বাইরে একবার ভিতরে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে আছি। ... সমস্ত দিনটা পাগলের মত কাটল আমার। তালাবদ্ধ হওয়ার পূর্বে খবর পেলাম নারায়ণগঞ্জ, তেজগাঁও, কার্জন হল ও পুরান ঢাকার কোথাও কোথাও গুলি হয়েছে, তাতে অনেক লোক মারা গেছে। ...গুলি ও মৃত্যুর খবর পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। ...নানা ভাবনায় মনটা আমার অস্থির হয়ে রয়েছে। এমনিভাবে দিন শেষ হয়ে এল। ... আমরা জেলে আছি। তবুও কর্মীরা, ছাত্ররা ও শ্রমিকরা যে আন্দোলন চালাইয়া যাইতেছে, তাদের জন্য ভালোবাসা দেওয়া ছাড়া আমার দেবার কিছুই নাই। মনে শক্তি ফিরে এল এবং দিব্যিচোখে দেখতে পেলাম ‘জয় আমাদের অবধারিত’। কোনো শক্তি আর দমাতে পারবে না।” (কারাগারের রোজনামচা, পৃ. ৬৯-৭০)

৭ জুনের এই রক্তাস্নাত কর্মসূচির মধ্যদিয়ে ছয় দফার প্রতি পূববাংলার জনগণের তুলনাহীন সমর্থন প্রমাণিত হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি গণমানুষের ঘৃণা তীব্রতর হয়। গ্রেপ্তার করা হয় অনেক নেতাকর্মীকে। দিনলিপিতে বঙ্গবন্ধু লেখেন, “৮ই জুন ১৯৬৬।। বুধবার। ভোরে উঠে শুনলাম সমস্ত রাতভর গ্রেপ্তার করে জেল ভরে দিয়েছে পুলিশ বাহিনী।... এর মধ্যে ৬ বৎসর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সের লোকও আছে। কিছু কিছু ছেলে মা মা করে কাঁদছে। এরা দুধের বাচ্চা, খেতেও পারে না নিজে। ... সমস্ত দিন এদের কিছুই খাবার দেয় নাই। অনেকগুলি যুবক আহত অবস্থায় এসেছে। কারও পায়ে জখম, কারও কপাল কেটে গিয়েছে, কারও হাত ভাঙ্গা এদের চিকিৎসা করা বা ঔষধ দেয়ার কোনো দরকার মনে করে নাই কর্তৃপক্ষ। ... বাধ্য হয়ে জেল কর্তপক্ষকে জানালাম, অত্যাচার বন্ধ করুন। তা না হলে ভীষণ গোলমাল হতে পারে। ... খবর এল ভীষণ গুলিগোলা হয়েছে, অনেক লোক মারা গেছে তেজগাঁও ও নারায়ণগঞ্জে। ... বন্দি অবস্থায় এই সমস্ত খবর পাওয়া পরে মনের অবস্থা কি হয় ভুক্তভোগী ছাড়া বুঝতে পারবে না। ... ছয় দফা যে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি—পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল পশ্চিম পাকিস্তানের শোসকশ্রেণী যে আর পূর্ব বাংলার নির্যাতিত গরীব জনসাধারণকে শোষণ বেশী দিন করতে পারবে না, সে কথা এবার আমি এসেই বুঝতে পেরেছি। বিশেষ করে ৭ই জুনের যে প্রতিবাদে বাংলার গ্রামে গঞ্জে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফেটে পড়েছে, কোনো শাসকের চক্ষু রাঙানি তাদের দমাতে পারবে না। ... রক্ত বৃথা যায় না। যারা হাসতে হাসতে জীবন দিল, আহত হল, গ্রেপ্তার হল, নির্যাতন সহ্য করল... আল্লাহর কাছে এই কারাগারে বসে তাদের আত্মার শান্তির জন্য হাত তুলে মোনাজাত করলাম। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, এদের মৃত্যু বৃথা যেতে দেব না, সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। যা কপালে আছে তাই হবে।...’ (পূর্বোক্ত, পৃ. ৭১-৭৪)

বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী আত্মবিশ্বাস সত্যি সত্যিই বাস্তবে পরিণত হয়। নেতাকর্মীদের হত্যা করে এবং জেল-জুলুম অব্যাহত রেখে—আন্দোলনের স্রোতকে শেষ পর্যন্ত দমন করতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ছয় দফা আদায় এবং শেখ মুজিবসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবির আন্দোলন তৎকালীন পুরো পূর্ববাংলায় দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এই আন্দোলনকে প্রহসনের মাধ্যমে নস্যাৎ করে দেওয়ার উদ্দেশে সামরিক জান্তা কর্তৃক করা হয় আগরতলা মামলা। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয় বীর বাঙালি। গণআন্দোলনের তোপে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা মামলার সকল আসামিকে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দিতে বাধ্য হয় আইয়ুব খান সরকার। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশাল জনসমুদ্রে গণসংর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা মঞ্চে ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘‘বঙ্গবন্ধু’’ উপাধি প্রদান করলে উপস্থিত লক্ষাধিক জনতা তা সমর্থন করেন।

জেলে বসে বঙ্গবন্ধু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ৭ জুনের হরতালে প্রাণ উৎসর্গকে বৃথা যেতে দেবেন না। বাস্তবে তাই হয়েছিল। ৭ জুনের রক্ত বৃথা যায়নি। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ববাংলায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামলী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানের জান্তা সরকার ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা টালবাহানার আশ্রয় নেয়। অপরদিকে, বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে সর্বাত্মক সামরিক প্রস্তুতি নেয়। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালিদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে এবং ছয় দফা এক দফায় পরিণত হয়। ৭ মার্চ ১৯৭১, ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর ২৫ মার্চ কালরাতে বাংলাদেশে নৃশংস গণহত্যা সূচনা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আক্রমণকারী ও দখলদাররা ছিল পাকিস্তানের পেশাদার সামরিক বাহিনী; দীর্ঘ প্রশিক্ষণে শাণিত ও যুদ্ধে অভিজ্ঞ এবং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। বিপরীতে বাঙালিদের ছিল শোষণ-নিপীড়ণের বিরুদ্ধে বারুদময় প্রতিবাদী মানসিকতা এবং স্বাধীনতার দৃঢ় ইচ্ছা ও শক্ত মনোবল। পাকিস্তানীদের তুলনায় এদেশের মানুষ ছিল শীর্ণকায় এবং তুলনামূলক ক্ষীনদেহী। কিন্তু এই মানুষরাই দেশ-মাতৃকাকে শত্রæমুক্ত করতে বিশাল হয়ে উঠে। সময় গড়ালে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিবাহিনীর নয়মাসব্যাপী প্রাণপণ মুক্তিযুদ্ধ এবং ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে বাঙালি পৌঁছে কাঙ্খিত লক্ষ্যে। ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বিশে^ মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

 

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক।

Link copied!