এমন দৃশ্য কখনো দেখা হবে না আর। পদ্মার বুকে এই দৃশ্যপট ফুটে ওঠেনি কখনো। হয়তো ফুটে উঠবেও না আর। বাংলার সব নৌপথের নৌযান এসে মিলেছে এক পথে। ২৫ জুনের সকাল। শনিবারের সকালের সৌন্দর্য হলো ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই পদ্মার মাওয়া প্রান্তে চোখে পড়ে লঞ্চের দীর্ঘ সারি। একটি দুটি নয়, শত শত লঞ্চের সারি। পদ্মার বুকে জেগে ওঠা অবয়বকে অভিবাদন জানাতে এ যেন জলযানের মিলনমেলা, তাতে যাত্রী হয়ে আসা দক্ষিণবঙ্গের লাখ লাখ মানুষের অভিবাদন।
শুধু লঞ্চ নয়, পদ্মার বুকে যান্ত্রিক, অযান্ত্রিক নৌকারও দীর্ঘ সারি। সবার গন্তব্য পদ্মা সেতুকে অভিবাদন জানিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা বা বাংলাবাজার প্রান্তে পৌঁছা। সেখানে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষ করে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এখানে উপস্থিত লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে সহভাগ করবেন তাঁর বিজয়ের গল্প। ২৩৮৭ দিনের এই বিজয়ের গল্পের প্রতিটি দিনের সঙ্গী বাংলার মানুষও। দেশের মানুষের সমর্থনও তাঁকে যুদ্ধে লড়ে যাওয়ার প্রণোদনা দিয়েছে। সুতরাং এই জনসভা থেকে তিনি দেশের মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাবেন।
পদ্মার পাড়ে বসে আমরা যে উৎসবের রং দেখতে পাচ্ছি, সেই রং ছড়িয়েছে বদ্বীপজুড়েই। আষাঢ়ের এই সকালকে নিয়ে শঙ্কা ছিল, বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো উৎসবের? শুরুর দিন থেকেও একই আশঙ্কার বৈরী হাওয়া তৈরি করা হয়েছিল। হবে না, হবে না। টাকা মিলবে না। মুরোদ নেই এমন সব কূটকাচালীর আস্ফালনকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। জয়ের ডিঙি ঠিকই ষড়যন্ত্র ডিঙিয়ে ২৫ জুনের ভোরে পৌঁছে গেছে। মাওয়ার আকাশ রোদ ঝলমল। পদ্মার ঢেউয়ে আজ যেন বাড়তি আহ্লাদ ছলকে পড়ছে। নদীর দুই পারের মানুষের আনন্দে, বিজয়ে পদ্মাও আজ আপ্লুত। পদ্মাপাড়ে বসে এই বিজয় দেখার আনন্দের কোনো তুলনা হয় না। চলুন মাতি তুলনাহীনা সেই উৎসবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক