• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
ডট বল

ক্রিকেটে চেয়েও সব পাওয়া যায় না


অঘোর মন্ডল
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২১, ১১:৫০ এএম
ক্রিকেটে চেয়েও সব পাওয়া যায় না

ক্রিকেট আসলে জীবনের মতো—চেয়েও সব সময় পাওয়া যায় না! এই কথাটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক ভালো জানেন ক্রিকেটাররা। দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার মুশফিক কি কথাটা জানেন না? জানেন। তবু তিনি দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা খেলতে না পারার আক্ষেপটা চেপে রাখতে পারলেন না! পরোক্ষভাবে মিডিয়ার কাছে কথাটা বলেই ফেললেন—কেউ তো আমার কাছে জানতে চাননি আমি এই সিরিজে অ্যাভেলেবল কি না!’ 

সোজা ভাষায় তিনি সিরিজটা খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। দলে থাকবেন। তেমনটা আশা করেছিলেন।

আশা আপনি করতেই পারেন। যেমন বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট আশা করছে তরুণদের নিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতবেন। সিরিজের প্রথম ম্যাচে তরুণরা জয়ের আশা জাগালেন। কিন্তু দিন শেষে জয় এলো না। অনেকে সান্ত্বনা খুঁজছেন—প্রায় জিতে গিয়েছিলাম—এই ভেবে! আসলে অভিজ্ঞতার কাঞ্চনমূল্য চুকিয়ে দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে প্রথম ম্যাচে। আপনিও সেটা দেখলেন ভিআইপি স্ট্যান্ডে বসে। তারপর আপনার ডাক এলো, বিসিবির সিইও আর মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যানের কাছ থেকে। নিশ্চয়ই সেখান থেকে একটা বার্তা পেয়েছেন, মিডিয়ার সামনে এভাবে কথা বলা আপনার ঠিক হয়নি। আপনি বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার।

কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, বোর্ড পরিচালক, বিসিবির বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই গণমাধ্যমে কথা বলেন। গোটা টিমের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সেটাকে অনৈতিক বলে মনে করেন না তারা! কিন্তু আপনি কেন বলতে গেলেন? আসলে আপনার বলার কী আছে। আপনি প্রভাবশালী ব্যাটার। পরিশ্রমী ও পেশাদার। আধুনিক ক্রিকেটের সবকিছু তিল তিল করে রপ্ত করেছেন। নিজের খেলা নিয়েই ভাবেন। আত্মমগ্ন থাকেন। নিজের জন্য নিজের মধ্যে ডুবে থাকবেন। আপনি কেন বলতে গেলেন—আমি তো কখনো বলিনি আমি এই সিরিজে অ্যাভেলেবল না! এটুকু বলার অধিকার আপনাকে দেয় না আপনার পেশাদারত্ব। নির্বাচকরা আপনাকে বিবেচনায় রাখেননি। রাখতে দিন। 

আপনারা মাঠে লড়াই করেন। অন্যরা মাঠের বাইরে খেলেন। খেলতে দিন। তবে এই খেলা ক্রিকেট নিয়ে নয়। ক্ষমতা নিয়ে। ক্রিকেট নিয়ে খেললে, অবশ্যই একজন সাবেক অধিনায়ককে নিয়ে আগামীতে তাদের পরিকল্পনা কিংবা চিন্তাভাবনা কী, সেটা জানাতে এবং জানতে আপনার মুখোমুখি বসতেন। কিন্তু মুখোমুখি বসলে নিজেদের ব্যর্থতার কথা উঠতে পারে। আপনাকে আগামী চারটা টেস্ট খেলানোর চিন্তা তাদের। আপনি সেই টেস্টের জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করুন না। এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই টেস্ট, তারপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই দুই টেস্ট। আপনার যা বলার ছিল, সেটা ওখানেই বলুন না। মুখে নয়। ব্যাটে।

মুশফিক ইতিহাসের ছাত্র। তাকে ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তবু একটা কথা স্মরণ করতে হচ্ছে; বাংলাদেশ ক্রিকেটে খেলোয়াড় হিসেবে একসময় যারা নিজেদের শোষিত-বঞ্চিত মনে করেছেন, শাসক হয়ে তারাই আবার অন্যদের শোষণ করেন। একসময় যারা অধিনায়ক থাকার পর দল থেকে বাদ পড়েছেন, তারা মিডিয়ায় বলেছেন, “অধিনায়ক হিসেবে স্বাধীনতা পাইনি। যেটুকু সৌজন্যতা আশা করেছি, তা পাইনি।” এ রকম ইতিহাস যে দেশের ক্রিকেটের পেছনে, সেখানে একজন মুশফিকুর রহিম কীভাবে আশা করেন, তার সঙ্গে কথা বলে তারপর তাকে দলে রাখা না রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে!

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় সমালোচকদের উদ্দেশে মুশফিকুর রহিম একটা কথা বলেছিলেন, যা গণমাধ্যম-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক বেশি আলোচিত হয়েছে। “আয়নায় নিজেদের মুখ দেখুন।” আয়নায় যে প্রতিচ্ছবি আসে, সেটা উল্টো হয়ে যায়। সেই উল্টো চেহারাটা আমরা আসলে কেউ বুঝতে চাই না। এই যে ক্রিকেট নিয়ে মাঠে আর মাঠের বাইরে এত ’খেলা’ হচ্ছে এটাকে কে কীভাবে দেখবেন, সেটা যার যার নিজস্ব। তবে ’খেলা’ শব্দটাকে উল্টো করলে ’লেখা’ হয়ে যায়। তবে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে ৯৯ ম্যাচ খেলা মুশফিকের ক্যারিয়ারে যদি দাঁড়ি পড়ে যায়, তাহলে সংখ্যাটা উল্টো করে লিখলেও সেটা ৯৯-ই হবে।

আয়নাবাজির ক্রিকেট জীবন আপনাকে কিন্তু একটা জায়গায় খুব সরল একটা অঙ্ক মিলিয়ে দিয়ে যেতে পারে। ৯৯!

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
 

Link copied!