• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অনন্ত-বর্ষা আপনারা সিনেমায় থাকুন, তবে...


শেখ আদনান ফাহাদ
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২২, ১০:৪১ এএম
অনন্ত-বর্ষা আপনারা সিনেমায় থাকুন, তবে...

ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে অনন্ত জলিল-বর্ষা দম্পতি অভিনীত সিনেমা ‘দিন-দ্য ডে’। ঈদ উপলক্ষে রায়হান রাফি পরিচালিত ‘পরাণ’ এবং অনন্য মামুন পরিচালিত ‘সাইকো’ নামের দুটো সিনেমাও মুক্তি পেয়েছে। তবে টেলিভিশন, ফেসবুক, ইউটিউব, পত্রিকাসহ সব মাধ্যমেই ‘দিন- দ্য ডে’ নিয়ে অধিক কথাবার্তা চলছে। একটা টিভি ফুটেজে দেখলাম, বর্ষা কেঁদে কেঁদে বলছেন, ভালো কাজের মূল্যায়ন কেউ করে না! তারা বরং সিনেমার জগৎ ছেড়েই চলে যাবেন!

‘দিন-দ্য ডে’ প্রকল্পের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ড. মুমিত আল রশিদ। সিনেমার সমুদয় পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করার আগে কিছু তথ্য আমাদের জানা থাকা দরকার। বলা হচ্ছে, এটি নির্মিত হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বাজেটে। এত বড় বাজেটের সিনেমা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এটাই প্রথম। ইরান-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দিন- দ্য ডে’। ছবির শুটিং হয়েছে বাংলাদেশ, তুরস্ক ও ইরানে। সিনেমার গল্প প্রাথমিকভাবে লিখেছেন অনন্ত জলিল নিজেই। পরে চিত্রনাট্য চূড়ান্ত হয়েছে কয়েকটি ধাপে।

এই সিনেমার একটি গান ‘শুধু তোমাকে চাই’ নির্মিত হয়েছে বাংলা আধুনিক কাব্য সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজের কবিতা ‘অমীমাংসিত সন্ধি’ থেকে। হেলাল হাফিজের কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’-এর অন্যতম জনপ্রিয় এই কবিতার ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেছেন গবেষক ড. মুমিত আল রশিদ। আর সেখান থেকে ফার্সি ভাষায় লিরিক্স লিখেছেন সমকালীন ফার্সি কবি আব্দুল জব্বার কাকায়ি। কবিতা থেকে রচিত এই গানটি একই সঙ্গে বাংলা এবং ফার্সি ভাষায় গাওয়া হয়েছে। সুর এবং মিউজিক কম্পোজিশন করেছেন আলি আসগার রাহিমি। বাংলা অংশ গেয়েছেন বেলাল খান এবং ফার্সি অংশ গেয়েছেন মোহাম্মদ রেজা হেদায়েতি। সিনেমায় এই গানের কোরিওগ্রাফি করেছেন নির্দেশক মোর্তেজা অতাশ জমজম এবং হাবিব রহমান। এই সিনেমার আরেকটি গান ‘তোকে রাখব খুব আদরে’ গেয়েছেন ইমরান মাহমুদুল ও আনিশা। স্নেহাশিস ঘোষের লিরিক্স ও ইমরানের দেওয়া সুরে রচিত এই গানের দৃশ্যায়নের কোরিওগ্রাফি করেছেন হাবিব রহমান। গানগুলো শুনতে কেমন হয়েছে, সেটি নির্ভর করবে একান্তই দর্শক-শ্রোতার রুচির ওপর। তবে আমার কাছে তুলনামূলকভাবে কবি হেলাল হাফিজের কবিতাভিত্তিক সংগীত আয়োজন অধিক শ্রুতিমধুর ও দর্শনীয় মনে হয়েছে। কোরিওগ্রাফি অবশ্যই উন্নত মানের হয়েছে উভয় সংগীত আয়োজনেই। তুরস্ক আর ইরানের অসাধারণ সব স্পটে,  চোখে আরাম দেয় এমন সব পোশাক, দৃশ্যায়ন বাংলাদেশের সিনেমার ক্ষেত্রে আগে দেখা গেছে বলে আমার জানা নেই। তবে অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে জলিল আর বর্ষাকে নিয়ে আমাদের কিছু কথা আছে।

নকল গল্প, অদ্ভুত সাউন্ড, মিউজিক, অপ্রস্তুত অভিনেতা-অভিনেত্রী, নিম্নমানের প্রযুক্তি ও সম্পাদনা নিয়ে বাংলাদেশের সিনেমা যখন ধুঁকছিল, তখন ২০১০ সালে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল। ইফতেখার চৌধুরীর পরিচালনায় অনন্ত জলিলের অর্থে এবং অভিনয়ে নির্মিত হয় ‘খোঁজ,দ্য সার্চ’। ঢাকার দেয়ালগুলো পোস্টারে ছেয়ে যায়। সিনেমা হিসেবে তেমন আহামরি কিছু না হলেও অশ্লীলতামুক্ত আধেয় হিসেবে মানুষের প্রশংসা পায় অনন্ত জলিলের প্রথম প্রয়াস। এরপর গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সোহানুর রহমান সোহান, অনন্য মামুনের পরিচালনায় অনন্ত জলিলের অর্থে যথাক্রমে ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’,  ‘দ্য স্পীড’ এবং ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ নির্মিত হয়। বলা বাহুল্য, অনন্ত জলিল শুধু অর্থ লগ্নি করেই ক্ষান্ত দেননি, প্রধান অভিনেতার কাজও তিনি নিজেই করার চেষ্টা করেছেন। অনন্ত জলিল একসময় নির্দেশক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করলেন। পরের কয়েকটি সিনেমায় তিনি নিজেই নির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে সর্বশেষ ‘দিন- দ্য ডে’র নির্দেশনায় ছিলেন ইরানের অতাশ জমজম। মূলত একজন সফল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং দানশীল ব্যক্তি হিসেবে সমাজে সম্মান পাওয়া মানুষ অনন্ত জলিল এবং তার স্ত্রী বর্ষা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে বেশ অর্থ এবং সময় বিনিয়োগ করে চলেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, অনন্ত জলিলের সিনেমায় কী আছে যে মানুষ অন্য সিনেমা বাদ দিয়ে এগুলো দেখার জন্য অর্থ ও সময় খরচ করবে?

বিশ্বের নানা অভিজাত পুরস্কার জেতার মতো অনেক সিনেমা বাংলাদেশ থেকেই নিয়মিত জন্ম নিচ্ছে। তবে পুরস্কার জেতা অনেক সিনেমা বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যর্থ হতে পারে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নির্মিত চলচ্চিত্রের সাফল্য নির্ভর করে অনেকাংশে দর্শক-শ্রোতার ওপর। পাবলিক সিনেমা হলে কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে যত বেশি দেখবে, সে সিনেমা তত বেশি বাণিজ্যিকভাবে সফলভাবে ধরে নিতে হবে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের ফিল্ম রিভিউ আর সাধারণ দর্শকের রিভিউ একই রকম হবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষেরও ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে। সাম্প্রতিককালে ‘আয়নাবাজি’ দিয়ে অমিতাভ রেজা দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সিনেমা শেষ হয়ে যায়নি। ‘আয়নাবাজি’ দেখার জন্য পুরো বাংলাদেশে একধরনের উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছিল।  আয়নাবাজির বাজেটও খুব বেশি ছিল না। বিশেষ করে টাকার অঙ্কে ‘দিন-দ্য ডে’র সঙ্গে তুলনীয় নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ‘দিন- দ্য ডে’ কি ‘আয়নাবাজি’ কিংবা ‘মনপুরা’র মতো জনপ্রিয়তা পাবে বা ব্যবসা সফল হবে? অনন্ত জলিলের সিনেমা-প্রচেষ্টা নিয়ে আমার দেওয়া ফেসবুক পোস্টে কয়েকজন সমঝদার মানুষের মন্তব্য একটা বস্তুনিষ্ঠ চিত্র পেতে আমাদের সহায়তা করবে বলে আশা করছি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের লার্নিং আইসিটি প্রজেক্টের নির্বাচিত সেরা গ্রাফিকস ডিজাইনারের গৌরব অর্জন করা মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ লিখেছেন, “দেশী সিনেমায় এতো উন্নত সাউন্ড ডিজাইন আর এতো ভালো গ্রাফিক্স আগে আসেনি। সিনেমায় অনেক কিছু বাংলাদেশের জন্য নতুন। ভালো মানের অভিনেতা অভিনয় করলে এটা আন্তর্জাতিক মানের ছবি হতে পারতো। এখনো অভিনয় আর স্টোরির হিসেব বাদ দিলে ছবির কোয়ালিটি আন্তর্জাতিক মানেরই। বিশেষ করে সাউন্ড এ ৭:১ ডলবি এটমোস সিনেমার সাউন্ডকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ সিনেমা হলে ১:৭ সাপোর্ট করে না। তাই মানুষ এই ফিলটাই পাবে না’।

জাবির আইবিএর ৪৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রিচি রহমান লিখেছেন, “এই টাকা দিয়ে অনন্ত জলিল প্রডিউসার হিসেবে বাংলাদেশের মেধাবী উঠতি ডিরেক্টর-অভিনয়শিল্পীদের বিশ্বমানের চলচ্চিত্র তৈরি করার সুযোগ করে দিতে পারতেন। সিনেমার সিনিক বিউটি আর বাজেট নিয়ে কোনো কথা নেই, কিন্তু অভিনয়, স্ক্রিনপ্লে, স্ক্রিপ্ট একেবারে নিম্নমানের। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, উনি যে এ রকম নিম্নমানের চলচ্চিত্র নিয়ে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করেছেন, শুধু তাই না, বাকিরা যারা এই লাইনে কাজ করছেন, তাদের ক্রমাগত বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছোটও করে যাচ্ছেন। উনি নিঃসন্দেহে একজন বড় মাপের ব্যবসায়ী, কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে তুলে ধরার আগে ওনাদের আরও অনেক প্রফেশনাল গ্রুমিং প্রয়োজন আছে”।

জাবির নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মুহিবুর রৌফ শৈবাল লিখেছেন, “ইরানের চলচ্চিত্র বিশ্ব সমাদৃত, আর ইরানের সাথে যৌথ প্রযোজনায় ডিজিটাল চলচ্চিত্র তৈরি করেছে অনন্ত আর বর্ষা, এদেশীয় অনেক চলচ্চিত্র জুয়াড়িদের বিষয়টি ভালো লাগে নাই। তাই এত গসিপিং। সেনা কমপ্লেক্সে ছবিটি দেখেছি, বাংলা চলচ্চিত্রের গতানুগতিক ধারার বাইরে ব্যতিক্রমী ও মানসম্মত ছবি ‍‍‘দিন- দ্যা ডে’।

জাবির সাবেক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন লিখেছেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথম সহায়তা করেছে তুর্কি, সেটা বলেছেন। আবার বাংলাদেশ আকারে ছোট কিন্তু মন অনেক বড় এই বিষয়ে আলাপ দিয়েছেন ‘দিন- দ্য ডে’ মুভিতে। তবে আমি মনে করি, তিনি একজন সিআইপি। নিজে নায়ক না হয়ে, একজন প্রযোজক কিংবা পৃষ্ঠপোষক হলে চলচ্চিত্রের আরও ভালো হতো।”

আমার মনে হয় উল্লিখিত কয়েকটি মন্তব্যে ‘দিন- দ্য ডে’ কিংবা অনন্ত জলিল-বর্ষা দম্পতির সিনেমা প্রচেষ্টার বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন আমরা পেয়ে গেছি। অনন্ত জলিল ও বর্ষা দম্পতিকে উদ্দেশ করে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কথা বলার আগে ‘দিন- দ্য ডে’ সিনেমা সম্পর্কে আমার নিজের কিছু মূল্যায়ন তুলে ধরতে চাই। লেখার শুরুর দিকে আমি গানের বিষয় উল্লেখ করেছিলাম। বলিউডে জাভেদ আখতার গান লেখেন, এ আর রহমান, আনু মালিকরা সংগীত আয়োজন করেন। আমাদের আজাদ রহমান, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল প্রমুখ অসাধারণ সংগীত স্রষ্টারা প্রয়াত হয়েছেন। সেখানে হেলাল হাফিজের কবিতা ফার্সিতে অনূদিত হয়ে গান হয়েছে, এটা অবশ্যই একটা বিশেষ ভালো লাগার বিষয়। যেসব লোকেশনে শুটিং হয়েছে, যেসব প্রযুক্তি, ব্যক্তি এবং যানবাহনের সমন্বয়ে দৃশ্যায়ন হয়েছে, সেটি বাংলাদেশে আগে কখনোই হয়নি। উন্নত প্রযুক্তি, প্রচুর অর্থ, দুর্দান্ত চোখধাঁধানো দৃশ্যায়ন, চমৎকার কিছু অ্যাকশন, রুচিশীল গান—এত কিছুর পরেও শুধু বাংলাদেশ-ইরান যৌথ প্রযোজনা নিয়ে বিশেষ আলাপ করা যেতে পারে।

ইরানের চলচ্চিত্র মানেই জীবননির্ভর, মানবিক, সামাজিক গল্পের অসাধারণ চিত্রায়ণ। ইরানের চলচ্চিত্র বিশ্বমানের এবং বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। অথচ ইরানের সিনেমায় গা গরম করা আইটেম সং, নায়ক-নায়িকার ঘনিষ্ঠ চুম্বন বা মিলন দৃশ্য নেই। এগুলো ছাড়াই ইরানের চলচ্চিত্র বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। সেই ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ‘দিন-দ্য ডে’। গভীরভাবে ভাবলে এর তাৎপর্য অনেক দীর্ঘ। একসময়ের পারিবারিক, সামাজিক সিনেমার দিন ফিরিয়ে আনতে পারে, এ ধরনের প্রযোজনা। তা ছাড়া ইরান, তুরস্ক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক এগুলো বাংলাদেশের জন্য অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয় নয়। ইরানের সিনেমা, তুরস্কের টিভি সিরিয়াল বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। তাদের গল্প ও নির্মাণশৈলী বিশ্বের যেকোনো উন্নত শিল্পের সঙ্গে তুলনীয়। তুরস্ক ও ইরান যেমন ইতিহাসনির্ভর অনেক প্রডাকশন নিয়ে আসছে, অনন্ত জলিলও এমনটা ভাবতে পারেন। ইতোমধ্যেই তিনি এই বিশাল সুন্দর জগতে প্রবেশ করেছেন। ইতিহাস ও রাজনীতিনির্ভর উন্নত মানের সিনেমা বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য দরকার।

সিনেমা যদি হয় সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার, সেই হাতিয়ার সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে পারেন অনন্ত জলিল। কারণ, তার সেই আর্থিক সামর্থ্য আছে। প্রচণ্ড ইচ্ছা আছে। সিনেমার প্রতি সংবেদনশীল এবং আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে দেশের ইন্ডাস্ট্রি বদলাতে বাধ্য। ‘দিন- দ্য ডে’ সিনেমার প্রতিটি গানেই সুফিবাদের পরশ পাওয়া গেছে। সুফিবাদের চর্চা এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইরানের নাম জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তির ধর্ম ইসলামের এত গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সুফিবাদের রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই প্রভাব। এ বিবেচনায়ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নির্মিত ‘দিন- দ্য ডে’ একটি অভিনব প্রযোজনা। সিনেমা মানেই তামিল সিনেমার ভয়াল দর্শন ভিলেন হতে হবে, বলিউডের আইটেম সং হতে হবে, শুধু অ্যাকশন হতে হবে, মস্তক-বিচ্ছিন্ন লাশ আর রক্তের দৃশ্য হতে হবে, এমনটা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। হলিউডের এত উন্নত মানের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অথচ মার্কিন মুল্লুকসহ পুরো পশ্চিমা বিশ্বে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধিতে হলিউডি মুভির ভূমিকা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। সিনেমার সঙ্গে যদি জীবনের সম্পর্ক সরাসরি থাকে, তবেই কিন্তু সিনেমা নির্মাণ সফল হয়। ‘দিন-দ্য ডে’ মুভিতে মাদকবিরোধী তৎপরতা দেখানো হয়েছে এবং বাংলাদেশ উঠে এসেছে ইতিবাচকভাবে। অথচ বলিউডে বাংলাদেশকে মূলত নেতিবাচকভাবেই দেখানো হয়।

এবার অনন্ত জলিল-বর্ষা দম্পতির অভিনয় নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। সিনেমায় নিজেদের অংশগ্রহণ, এটা একান্তই তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা। তবু আমাদের বলতে হবে, সফল ব্যবসায়ী ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তিত্ব হিসেবে অনন্ত জলিল-বর্ষা দম্পতিকে সব শ্রেণির মানুষ খুব বাহবা দিলেও অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে চলচ্চিত্র বোঝেন, অভিনয় সম্পর্কে বোধসম্পন্ন মানুষজন তাদের গ্রহণ করছেন না। অভিনয়, নির্দেশনাসহ সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অংশের মানুষদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত হতে হয়। প্রাসঙ্গিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, নিয়মিত অনুশীলনই একজন মানুষকে অভিনেতা বা নির্দেশক বানায়। একজন সফল ব্যবসায়ী চাইলেই রাতারাতি ভালো অভিনেতা বা নির্দেশক হতে পারবেন না। আবার একজন দক্ষ, সফল নির্দেশককে দিয়ে বিশ্বমানের গার্মেন্টস ব্যবসাও হবে না। অনন্ত জলিল আর বর্ষা দম্পতির প্রযোজনায় গুণী নির্মাতারা যদি দেশি-বিদেশি দক্ষ অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং অন্যান্য কলাকুশলীদের সমন্বয়ে বাংলাদেশে সিনেমা করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে আরও ভালো কিছু হবে। মানুষের আপত্তি কিন্তু ‘মানুষ’ অনন্ত জলিল আর বর্ষাকে নিয়ে নয়। আপত্তি না হলেও আফসোস অভিনয় এবং উচ্চারণ নিয়ে। আর একান্তই যদি অভিনয় বাদ দিতে না পারেন, তাহলে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে উচ্চারণ আর অভিনয়ের ওপর নিবিড় প্রশিক্ষণ নিতে পারেন দুজন। অ্যাকশন শেখার পাশাপাশি উচ্চারণ ও অভিনয় শেখাটাও গুরুত্বপূর্ণ, বরং অধিক গুরুত্বপূর্ণ। 
 

লেখক: শিক্ষক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ।

Link copied!