• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
বীরগাথা ১৯৭১

‘মরা মানুষের খাটিয়া দিয়ে নেওয়া হয় আমাকে’


সালেক খোকন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ০৩:৪৯ পিএম
‘মরা মানুষের খাটিয়া দিয়ে নেওয়া হয় আমাকে’

নাম তার জয়নাল আবেদীন বাদশা। সবাই ডাকে বাদশা বলে। ছোটবেলা থেকেই একটু মুডি। দেখতে সুদর্শন। কথাবার্তা বলেন কম। পরিবারের বাইরে তেমন মেশেন না। ফলে চাচাতো-ফুফাতো ভাইয়েরাই তার খেলার সাথি। তিন ভাই, এক বোন নিয়ে সংসার। সবার বড় বাদশা। অবসর কাটান বাল্যবন্ধু জামাল ও আশরাফের সঙ্গে। ফুটবল খেলা আর হুইল ছিপ দিয়ে মাছ ধরাতেই তার বেশি আনন্দ।

মা জরিনা বেগম সাধারণ গৃহিণী হলেও বাদশার বাবা আতাউর রহমান ছিলেন শিক্ষক। নওগাঁ সদরের চকগরীব স্কুলে পড়াতেন তিনি। দাদা খোদাবক্স সরদারের নামডাক ছিল বেশি। সহায়-সম্পত্তিতে তার কমতি ছিল না। ফলে দশ গ্রামের সবাই তাকে এক নামে চিনত।

সময়টা ১৯৬৩। বাদশা তখন ক্লাস ফাইভের ছাত্র। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান তার বাবা। বাদশাদের তখন ঠাঁই হয় দাদাবাড়িতে। দাদা খোদাবক্স সরদারই ছিলেন তার একমাত্র অভিভাবক। ফলে অর্থ ও প্রভাব দুটিই ছিল আকাশচুম্বী। ওই বয়সেই বাদশা সিগারেট খেতেন। যেনতেন ব্র্যান্ড তিনি হাতে নিতেন না! ধোঁয়া তুলতেন পাকিস্তানি ‘উইলস নেভিগার্ড’ সিগারেটে। দাম ছিল ৯ আনা। ওই সময় চালের দামই ছিল প্রতি সের ১২ থেকে ১৪ আনা। দাদার আদর আর স্নেহে এভাবেই বড় হতে থাকেন বাদশা।

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বাদশা, ছবি: সালেক খোকন

সময় গড়িয়ে আসে ১৯৭১। দেশের অবস্থা তখন অন্য রকম। কাগজ তৈরি হত পূর্ব পাকিস্তানেই। অথচ তা কিনতে হত ৬ টাকা দিস্তায়। চিনির নাম ছিল আরও বেশি। বৈষম্যের এমন খবরগুলো বাদশা জানতেন ইত্তেফাক আর দৈনিক বাংলার খবর পড়ে।

৭ মার্চ ১৯৭১। বাদশা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনেন এক দিন পর, রেডিওতে। তিনি বললেন, ‘‘আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবা না…।’’ কথাগুলো বাদশার মনে দাগ কেটে যায়। মনে একটি চিন্তাই ঘুরপাক খেতে থাকে–‘কিছু একটা করতে হবে’।

২২ এপ্রিল, শুক্রবার। সকালবেলা। মানুষের আর্তনাদে ঘুম ভাঙে বাদশার। দেখলেন, বাড়ি থেকে ২০০ গজ সামনে ধোয়া। রাস্তার ওপর শুয়ে আছে শত শত লোক। এমন দৃশ্যে খানিকটা ভড়কে যান তিনি।

পাকিস্তানি আর্মিরা ওই দিন ক্যাম্প বসায় নওগাঁ সদরের সিও অফিসে। তারা জ্বালিয়ে দেয় আশপাশের গ্রামগুলো। রাজশাহী থেকে নওগাঁয় ঢোকে আর্মিদের আরও সাঁজোয়া গাড়ি। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। প্রাণ বাঁচাতে সবাই আশ্রয় খুঁজে নেয় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে। প্রথমে সালুকায় এবং পরে চাকলা বকতারপুর গ্রামে আশ্রয় মিলে বাদশাদের।

প্রায় প্রতিদিনই একেক গ্রামে হানা দেয় পাকিস্তানি আর্মি। তাদের পথ চিনিয়ে সাহায্য করে শান্তি কমিটির লোকেরা। যুবক বয়সীরা ছিল টার্গেট। গুলি করে তাদের মেরে ফেলা হতো। বাদশার বয়স তখন ষোলো। দেশে থাকলে মরতে হবে। তাই জোট বাঁধেন বকতারপুর গ্রামের আনোয়ারুল, তারা ও লতিফের সঙ্গে। গোপনে পরিকল্পনা করেন মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার। কাউকে না জানিয়ে এক সকালে তারা ঘর ছাড়েন। দেশের টানে গ্রামের সাধারণ যুবকদের হাত ধরেই পথে নামেন বাদশা।

শুনছিলাম যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জয়নাল আবেদীন বাদশার জীবনকথা। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার চকবাড়িয়া গ্রামে।

মুক্তিযোদ্ধা বাদশার খোঁজটি আমরা পাই তারই এক সহযোদ্ধার কাছে। ঢাকার টিকাটুলিতে থাকেন তিনি। কেএম দাস লেনে হরদেও গ্লাস ওয়ার্কসের একটি শ্রমিক কলোনিতে। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নিজস্ব সম্পত্তি এটি। বস্তিসদৃশ এই কলোনির বেহাল দশা আমাদের আবেগতাড়িত করে। দেশের জন্য রক্ত দেওয়া এক মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা খুঁজে পাই এখানকারই ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরে।

কথোপকথনের শুরুতেই সৌজন্যবশত আমরা প্রশ্ন করি, কেমন আছেন? উত্তরে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘‘এত বছর ধরে ডান পা ভাঁজ করতে পারি না। চলতে হয় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। পা ব্যথা করে সব সময়। প্রস্রাব-পায়খানা করতে সমস্যা হয়। তবু ভালো আছি। খারাপ আছি ভাবলে তো বেঁচে থাকতে পারতাম না।’’

বাদশার উত্তরটি আমাদের মনে নাড়া দেয়। আমরা খানিক নীরব থাকি। অতঃপর আবারও শুরু করি আলাপচারিতা।

 

কোথায় ট্রেনিং নিলেন ?

‘‘এপ্রিলের শেষ দিকের কথা। বাড়ি থেকে ৭০ কিলোমিটার হেঁটে সন্ধ্যায় আমরা পৌঁছি ভারতের বালুরঘাটে। আমাদের পথ দেখিয়ে নেয় স্থানীয় একজন গাইডার। ওখানেই ছিল মধুপুর ইয়ুথ ক্যাম্পটি। সেখানে দেখা হয় আমাদের স্কুলের শিক্ষক তৌফিক ও রহিম স্যারের সঙ্গে। তাদের পরামর্শে যাই আব্দুল জলিল সাহেবের (প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা) কাছে।

তার সঙ্গে সেটিই আমার প্রথম সাক্ষাৎ। কিন্তু তার আন্তরিকতায় মনে হলো যেন অনেক দিনের পরিচয়। আমার দিকে তিনি খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, ‘তুই তো যুদ্ধ করতে পারবি না। তুই ট্রেনিং নিয়ে কী করবি? ইয়ুথ ক্যাম্পে তুই থাকেক। সেখানে তোর স্যারেরা আছে। আমি তাদের বলে দেব। দেশ স্বাধীন হলে আমরা দুভাই বাড়ি চলে যাব।’ আমার প্রচণ্ড রাগ হলো। বললাম, ‘তাহলে আমাদের আর থাকার দরকার নাই। আমরা ভেতরে যাই। আমাদের মাইরা ফালাক।’ আমার কথায় তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। অতঃপর একটা চিরকুট লিখে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন ‘ক্যাম্পে যা’।

মধুপুর ক্যাম্পে যেতেই আমাদের রিক্রুট করে নিল। রাত পোহাতেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রতিরামপুর ক্যাম্পে। সেখানে ৪-৫ দিন চলল লেফট-রাইট। অতঃপর আমাদের পাঠানো হয় শিলিগুড়ি পানিঘাটায়। আমরা ট্রেনিং নিই ২১ দিন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন কস্যপ ছিলেন ক্যাম্পের দায়িত্বে। আমরা ছিলাম সি কোম্পানিতে। প্রশিক্ষক হায়দার আলীর মুখটি আজও মনে ভেসে ওঠে। আমার এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নং ছিল ৫২৪৬।’’

ভারতীয় সেনাদের আন্তরিকতার কথা জানাতে তিনি শোনালেন একটি ঘটনা। তার ভাষায়, ‘‘প্রতি সন্ধ্যায় জাতীয় সংগীত গেয়ে আমাদের তাঁবুতে ফিরতে হতো। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় চুল পরিমাণও নড়া যাবে না, এমনটাই ছিল নিয়ম। ওখানে একটু পরপরই বৃষ্টি হতো। একদিন আমাদের ফলিং করিয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়া হচ্ছে। হঠাৎ শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আমরা জোরে দৌড় দিই।

বৃষ্টি থামতেই আবার আমাদের ডাকা হলো। ভারতীয় আর্মির অফিসাররা তখন প্রচণ্ড রেগে বললেন, ‘বৃষ্টির কারণে আপনারা তো দেশের জাতীয় সংগীতের প্রতিই শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি। আপানার কীভাবে দেশ স্বাধীন করবেন? বি কোম্পানি ছিল আমাদের পাশেই। ওরাও একই অপরাধ করেছিল। শাস্তি হিসেবে ওই রাতেই বৃষ্টির মধ্যে ওদের ক্রলিং করানো হলো। আমাদের শাস্তি দেওয়া হয় পরদিন সকালে। পিটি করতে হয়েছিল কয়েক ঘণ্টা। আজও জাতীয় সংগীত শুনলে শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়ে যাই। মনে পড়ে যায় সে দিনটির কথা।’’

তিনি বলেন, ‘‘নয় মাসে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার মতো মুক্তিযোদ্ধা আমরা নই। ভারত সরকার যদি ট্রেনিং, অস্ত্র ও তাদের আর্মি পাঠিয়ে সাহায্য না করত তবে নয়শ বছরেও এ দেশ স্বাধীন হতো না। মুক্তিযুদ্ধে তাদেরও বহু সৈন্য শহীদ হয়েছে। তাদের ঋণ আমরা কোনো দিনও শোধ করতে পারব না।’

ট্রেনিং শেষে কোথায় কোথায় যুদ্ধ করলেন ?

মুক্তিযোদ্ধা বাদশা উত্তরে বলেন, ‘‘অস্ত্র নিয়ে আমরা চলে আসি মধুপুর ক্যাম্পে। আজমলের গ্রুপে আমাদের মিক্সড করে পাঠানো হয় বগুড়ায়। আমরা ৮৫ জন গেরিলা। আজমল ছিলেন কমান্ডে। দিনের বেলায় বিচরণ করতাম না। রাতে চলত সব অপারেশন। ৭ নং সেক্টরের অধীনে আমরা যুদ্ধ করি বগুড়ার তিলকপুর, আক্কেলপুর ও আদমদীঘিতে।’’

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের ভূমিকা প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা বাদশা বলেন, ‘‘রাজাকাররা না থাকলে পাকিস্তানি সেনারা এত মানুষ হত্যা করতে পারত না। তাদের পথ চিনিয়ে, খাদ্য দিয়ে, তথ্য দিয়ে সাহায্য করত রাজাকারেরা। আবার এটা ঠিক, সে সময় কেউ কেউ জীবন বাঁচাতেও রাজাকারের তালিকায় নাম লিখায়। কিন্তু তারা মনেপ্রাণে ছিল আমাদের পক্ষে। গোপনে ওরা আমাদের নানা খবর দিয়ে সাহায্য করত।’’

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া একটি গুলি বাদশার ডান পায়ের উরুর ভেতর দিয়ে ঢুকে হাড়ের কিছু অংশ গুঁড়ো করে দেয়। অপারেশন করার পর তার ডান পা ছোট হয়ে যায়। তিনি পা ভাঁজ করতে পারেন না। চলেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। পায়ে ব্যথা হয় সব সময়।

সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। কান্না জড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘‘৮ ডিসেম্বর ১৯৭১। শুক্রবার। বেলা ১২টা। তিলকপুর থেকে রওনা হয়ে বিকেল ৪টায় আমরা আদমদীঘি পৌঁছি। পরিকল্পনা ছিল আদমদীঘি থানা উড়িয়ে দেওয়ার। পাকিস্তানি আর্মির একটি ক্যাম্প ছিল ওখানে। আমরা ৮৫ জন। কমান্ডে আজমল। ক্রলিং করে উত্তর-পশ্চিম দিকটা আমরা ঘিরে ফেলি। আমার কাছে একটি এলএমজি। হঠাৎ শুরু হয় গোলাগুলি। ডান পাশ থেকে আমি কাভারিং ফায়ার দিই। অন্যরা তখন পজিশন নেয়।

পাকিস্তানিদের কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্র। তারা আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। আমরা থেমে থেমে তার প্রত্যুত্তর দিই। আমাদের গোলাবারুদ তখন শেষের দিকে। গোলাগুলি হঠাৎ থেমে গেল। কমান্ডার বললেন, ‘উইথড্রো’। আমি অবাক হলাম। দুই খেজুরগাছের মাঝে হাঁটুগাড়া অবস্থায় ছিল আমার পজিশন। পাশেই সহযোদ্ধা মুসলিম। গুলি কেন বন্ধ? সে-ও কিছু বলতে পারে না। আমি পেছন ফিরে অন্য সহযোদ্ধাদের দেখার চেষ্টা করি।

ঠিক সে সময়ই পাকিস্তানি সেনাদের একটি গুলি আমার ডান পায়ের উরুতে এসে লাগে। প্রথম টেরই পাইনি। মনে হলো উরুতে কী যেন কামড় দিচ্ছে। ভাবলাম জোঁকে ধরেছে। হাত দিতেই হাড়ের ভেতর আঙুল ঢুকে গেল। খানিকটা হাড়ের গুঁড়ো ও মজ্জা বেরিয়ে এল আঙুলে। আমার পা তখন কাঁপছে। পা’টা সোজা করতেই চামড়ার মাঝে ভাঁজ হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে উপুড় হয়ে পড়ে গেলাম।

শরীর তখন ঘামছে। পা-টা নাড়াতে পারছিলাম না। হাতে ভর দিয়ে আমি পেছনের দিকে যেতে থাকি। ধানক্ষেতের আইলের ওপর দিয়ে পা-টা টানতেই, খটাশ শব্দে বাড়ি লাগে। যন্ত্রণায় আমি তখন কাতরাচ্ছি। মনে হল মারা যাব। মায়ের কথা বারবার মনে হচ্ছিল। আমাকে দেখে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে এল আনোয়ারসহ দুজন। ওদের ঘাড়ে ভর দিয়ে আমি পেছনে সরে আসি।

মরা মানুষের খাটিয়া দিয়ে আমাকে নেওয়া হয় ঝালঘরিয়া গ্রামের আফজাল ডাক্তারের বাড়িতে। সেখানে চলে প্রাথমিক চিকিৎসা। উত্তরবঙ্গ স্বাধীন হলে আমি খাটিয়া দিয়েই বাড়ি ফিরি তারিখ। আমার কষ্ট দেখে মা খুব কেঁদেছিলেন। প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতাল, পরে রাজশাহী এবং সবশেষে ঢাকা মেডিকেলে চলে আমার চিকিৎসা।’

বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই সময় দেশের অবস্থা যা ছিল, তাতে যুদ্ধে ছোট ছোট অপরাধীদের ক্ষমা করাটা সঠিকই ছিল। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা নয়, সে সময় মূল সমস্যা তৈরি করেছিল পাকিস্তান সরকারের অনুগত কিছু আমলারা।’

জিয়াউর রহমানকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। ক্ষমতার জন্য জিয়াউর রহমান রাজাকারদের পুনর্বাসিত করেছেন, তাদের রাজনীতি করার বৈধতা দিয়েছেন। তার দলের হাত ধরেই এ দেশে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী হয়েছে রাজাকাররা। তাদের গাড়িতে উড়েছে লাল-সবুজ পতাকা। মুক্তিযোদ্ধা জিয়া স্বাধীনের পর হয়েছিলেন রাজাকারদের বন্ধু। এর চেয়ে দুঃখের আর কী আছে। যারা এ দেশ চায়নি, স্বাধীন দেশে তারা রাজনীতি করে কোন যোগ্যতায়!’

মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মনে করেন, দুর্নীতি না থাকলে দেশটা আরও এগিয়ে যেত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন মাঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গায়, খেলাধুলা করে, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে তখন মন ভরে যায় এই মুক্তিযোদ্ধার।

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জয়নাল আবেদীন বাদশা এখন প্রয়াত। কিন্তু তার বলা সকল কথা মুক্তিযুদ্ধের অকাট্য দলিল হয়েই থাকবে। পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলে গেছেন শেষ কথাগুলো, ‘তোমরা হুজুগে বাঙালি হইও না। প্রকৃত সত্য খুঁজে নিও। মিলেমিশে থেকো। কাজের প্রতি সৎ থেক। মনে রেখ, দেশটা এগিয়ে যাবে সৎ লোকদের সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।’

 

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ গবেষক

Link copied!