• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘কলিজার টুকরা আমার বুকে ফিরল’


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২৪, ০৮:৩৬ পিএম
‘কলিজার টুকরা আমার বুকে ফিরল’
জাহাজ থেকে নামার আগে। ছবি: সংগৃহীত

সোমালিয়া জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে দীর্ঘদিন পর জন্মভূমির মাটিতে পা পড়েছে ২৩ নাবিকের। পরিবারের সদস্য, স্বজনদের কেউ কেক, কেউ ফুল নিয়ে বরণ করে নিয়েছেন প্রিয়জনকে। স্বজনকে ফিরে পাওয়ায় আবেগাপ্লুত সবাই। কোন কোন নাবিককে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।

স্বজনদের ভিড়ের মধ্যে ছিলেন ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের মা জোস্না বেগম। ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। বিবিসি বাংলার কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, “ভেবেছিলাম কলিজার টুকরাকে ফেরত পাবো না। কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা ছিল। বড় বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে সন্তান আমার বুকে ফিরল। আর কারো পরিবার যাতে এই পরিস্থিতিতে না পড়ে সে দোয়া করি।”

আবেগাপ্লুত ছিলেন নাবিকরা। তারা স্বজন প্রিয়জনদের কাছে পেয়ে চোখে ছিল কান্না আর মুখে ছিল হাসি। জাহাজের ডেক থেকেই এক নাবিক বলছিলেন, “আজকের এই মুহূর্তটা খুবই স্পেশাল আমাদের জন্য। দীর্ঘ ৩৩ দিন যে বিভীষিকার মধ্যে দিয়ে গেছি, তার অবসান ঘটলো।”

ফিরে আসা নাবিকদের আরেকজন বললেন, “এই দিনটার জন্য অনেক অপেক্ষা করছিলাম। পরিবারের কাছে ফিরতে পারবো কি না সে শঙ্কায় ছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “অবশেষে দেশের মাটিতে ফিরলাম। মনে হচ্ছে আমার নতুন জন্ম হয়েছে।”

জিম্মি দশার মুহূর্তগুলো নিয়ে আরেক নাবিক বললেন, “পুরো একটা মাস বিভীষিকাময় ছিল। খুব খারাপ সময় ছিল। দ্রুত শেষ হয়েছে এজন্য স্বস্তি। সেই মুহূর্তগুলোর কথা আর মনে করতে চাই না।”

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এক নাবিক বলেন, বন্দিদশার প্রথম কয়েক দিন ভয়াবহ অবস্থায় ছিলাম আমরা। শুরুর দিকে ব্রিজে অবস্থান করতাম। তারা সবসময় ভারী অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাহারা দিতো। তারা যাতে খারাপ ব্যবহার না করে সেজন্য আমরা তাদের সঙ্গে খুবই ভালো আচরণ করি। একটা সময় দস্যুরা একটু সহজ হলেও সবসময় পাহারা দিতো।”

ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খানের বড় ভাই ওমর ফারুক এসেছেন ছোট ভাইকে নিয়ে যেতে। তিনি বলেন, “এ ধরনের পরিস্থিতিতে এই প্রথম পড়েছিলাম আমরা। আর কারো পরিবার যাতে এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি না হয়। রোজার ঈদ করতে পারি নি। আমাদের পরিবারের জন্য আজ ঈদের দিন।”

মুক্ত হয়ে দেশে ফেরা নাবিকদের স্বজনরা ছাড়াও বন্দরে উপস্থিত ছিলেন জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারাও বরণ করে নেন নাবিকদের। তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

চলতি বছরের ৪ মার্চ সাগরে যাত্রা করার এক সপ্তাহ পর ১২ মার্চ জলদস্যুর কবলে পড়েছিলেন নাবিকেরা। মঙ্গলবার ( ১৪ মে) বিকেলে চট্টগ্রামের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে পদার্পণের পর নাবিকেরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তাদের ভাষ্য, তারা যেন নবজন্ম পেয়েছেন।

Link copied!