মধুমাস জৈষ্ঠ্যের রেশ যেন কাটছেই না। এই চিত্রের দেখা মিলছে ফলের বাজারগুলোতে। বাজারে এখনো আছে আম, কাঁঠালসহ কিছু মৌসুমি ফল। এরই মাঝে আসতে শুরু করেছে রসালো ফল আনারস এবং লটকন।
বাজারে বিদেশি ফলের চেয়ে কদর বেশি দেশীয় ফলের। তবে মৌসুম শুরু কিংবা শেষ, যাই হোক, ক্রেতাদের অভিযোগ মূল্যবৃদ্ধির বিষয়। বিক্রেতারা বলছেন, এখন ক্রেতা কম। সামনে আরো বাড়বে এসব ফলের দাম।
আম এবং কাঁঠালের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। এখন শুরু হয়েছে আনারস এবং লটকনের মৌসুম।
শেষদিকে এসে মৌসুমি ফলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) কারওয়ান বাজারের খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু ফলের দাম বেড়েছে মাসের ব্যবধানে আর কোনোটার বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে।
মৌসুমের শুরুতে এই বাজারে পাইকারী দরে আম বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪৫ টাকা। মাসের ব্যবধানে এই আমের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে এই পাইকারী বাজারে কাঁঠাল বিক্রি হয়েছে প্রতি পিচ ১০ থেকে ৭০ টাকা এবং সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ১৫০ টাকা। আর মৌসুমের শুরুতে আনারস বিক্রি হয়েছে প্রতি পিচ ৫ থেকে ৩০ টাকা এবং সপ্তাহের ব্যবধানে আনারস বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকা। লটকন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৭০ টাকা এবং সপ্তাহের ব্যবধানে লটকন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে।
অপরদিকে, খুচরা বাজারে মৌসুমের শুরুতে আম প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৫০ টাকা। মাসের ব্যবধানে বর্তমানে আম বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০৫ টাকা পর্যন্ত।
একইভাবে মৌসুমের শুরুতে আনারস বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ৪০ টাকা এবং বর্তমান বাজার ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। লটকন বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা এবং বর্তমান বাজার ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমের দাম বাড়তে পারে ১০০ টাকার উপরে। একইভাবে আনারস ২০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁঠাল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও লটকনের দাম বাড়তে পারে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
মোহাম্মদ নুরুজ্জামান নামে এক রিকশা চালক এসেছেন ফলের বাজারে। এক ফল দোকানিকে দশ টাকা দিয়ে চাচ্ছেন পেয়ারা খেতে। কথা হলে তিনি বলেন,
“আমি রিকশা চালায়া খাই। আমের যে দাম। তাতে আম কিনতে গেলে চালের দাম হয় না। যখন আম খুব উঠছিল তখন আম কিনে খাইছি। তখন আমের দাম কম ছিল। এখন আম কমে আসছে আর দাম বাড়তেছে।”
আরিফ হায়দার নামে এক ক্রেতা বলেন, “বাড়িতে ছোট বাচ্চারা আছে। ফলের পুষ্টি তাদের দিতে হয়। তাই ইচ্ছা না থাকলেও কিনতে হয়। এখন তো যত দিন বাড়ছে আম-কাঁঠাল কমে আসছে। আর দামও বাড়ছে। ফলে আগে যেখানে ৩ টা আম কিনতাম। এখন একটা আম কিনছি।”
খুচরা বিক্রেতা আমিনুল হক বলেন, “দাম বেড়ে যাওয়ায় ফলের বাজারে ক্রেতা কম আসছে। বিক্রিও কমে গেছে। আগে সারাদিনে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হইত। এখন ১০ হাজার টাকাও হয় না। ফলের দাম বাড়লে কিনবে কিভাবে। আর আমরা তো লোকসান দিয়ে বিক্রি করব না। আমের দাম সামনে আরও বাড়বে। ১০০ টাকার উপরে দাম হবে আমের।”
শাহজাহান মিয়া নামের অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, “আনারস ৩৫ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দিন যাচ্ছে আর দাম বাড়ছে। আনারসের দাম ৬০ টাকা পর্যন্ত হবে আর কিছুদিনের মধ্যে। বাজারে ক্রেতা তেমন নেই। দাম বেশি থাকলে ক্রেতা কম হবে স্বাভাবিক।”
সুজন নামে এক লটকন বিক্রেতা বলেন, “দাম এখনো ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এই লটকন বাজারে থাকবে আর ২০ দিন। ২০ দিনের মধ্যে বাজার দর ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠবে। কারণ শেষ হয়ে আসবে লটকন।”
গ্রীণ ফুড এজেন্সীর পরিচালক রাসেল খান বলেন, “এখন যত দিন যাবে আম কমে আসবে। মৌসুম তো শেষের দিকে। আগে আম বিক্রি হইছে ২০ থেকে ৪৫ টাকা। তুলণামূলক দাম কম ছিল। ঈদের পর থেকে দাম বাড়তে শুরু করছে। বর্তমানে ক্রেতার সংখ্যাও কম।”
আড়তদ্বার উজ্জ্বল বলেন, “আনারসের মৌসুম শুরু হইছে। শুরুর দিকেই বাজার একটু চরা থাকে। সপ্তাহ খানেক আগে কম ছিল। বিক্রি হইছে ৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এই আনারসের দাম বাড়বে আরও।”
কাঁঠাল বিক্রেতা নেছার বলেন, “আর কয়েকদিন আছে কাঁঠাল। শুরু দিকে কম ছিল। এই কাঁঠাল ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। দিন যাবে কাঁঠাল শেষ হয়ে আসবে। আর দামও বাড়ব ”