এ বছরের প্রথম নয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান।
এর আগে ২০২০ সালে ছিল ৩২ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক।
বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ (বিআই) ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টার (ডিটিসি) যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।
এ সময় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিটিসি চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু।
ড. হাদিউজ্জামান বলেন, “ দেশে দুর্ঘটনার ধরন বদলেছে, মুখোমুখি দুর্ঘটনার চেয়ে পেছন থেকে আঘাতের ঘটনা ঘটছে বেশি। এতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই তিন মাসে ২৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। আর এসব দুর্ঘটনায় যুবকদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।”
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, “ঢাকাসহ দেশের ২২২ ব্লগস্পট যদি ঠিক করা হয় তাহলে দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশই কমে আসবে। তবে আমাদের দাবি অনুযায়ী, সর্বশেষ মাত্র ১২টি ঠিক করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধুমাত্র চালকদের দায়ী করলে হবে না। পথচারীও এখানে অনেকাংশে দায়ী। ফুটপাত না থাকলে পথচারীদের ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে।”
এছাড়া বেশ কিছু নির্দেশনা আছে সেগুলো পথচারীরা মানেন না বলেও জানান এই নেতা।
ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আপনারা দেখবেন চালক হয় আমাদের সমাজের ওই মানুষগুলো যারা ছোটকালে বাবা-মা হারা অথবা বাবা-মার বিচ্ছেদের কারণে কোনো জরাজীর্ণ অবস্থায় বড় হয়েছে। এই মানুষগুলোই আস্তে আস্তে চালক হয়ে যাচ্ছে। তারপরও তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।”
সড়ক নিরাপদ করতে হলে কমপক্ষে ৬৭ লাখ চালককে প্রশিক্ষণ দিতে হবে জানিয়ে বক্তারা বলেন, “ড্রাইভিং সেক্টরে যদি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী না আসে এবং চালকদের যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কখনোই বন্ধ হবে না। দেশে গাড়িচালক তৈরি হয় তার ওস্তাদের হাত-পা টিপতে টিপতে। এছাড়া চালকদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ নেই। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন চালকদেরকে একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। মালিকদের দেওয়া ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় বেপরোয়া গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।”
এই সংলাপে আরও অংশগ্রহণ করেন, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক শহীদুল আজম, বিআরটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) শুকদেব ঢালী, ব্রি. জেনারেল (অব.) জিএম কামরুল ইসলাম, সেবক সভাপতি খান মো. বাবুল, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের তাসনিয়া মেহরীন।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ারের বাদল আহমেদ, মোটর ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের আবুল বাশারসহ প্রশিক্ষক ও চালকরা।