• ঢাকা
  • বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩০, ১১ রমজান ১৪৪৬
পূজামণ্ডপ-বাড়িতে হামলা

২৮ মামলায় আসামি সাড়ে ৯ হাজার, গ্রেপ্তার ২২৯


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২১, ১০:৪৯ এএম
২৮ মামলায় আসামি সাড়ে ৯ হাজার, গ্রেপ্তার ২২৯

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে টানা তিনদিন ধরে পূজামণ্ডপ, মন্দিরসহ হিন্দুদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

এসব হামলার ঘটনায় ২৮টি মামলায় অজ্ঞাতসহ ৯ হাজার ৫২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এ পর্যন্ত ২২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এর আগে গত ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় ফেনীতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা করে। একটি মামলায় ২০০-২৫০ জন। অপর মামলায় ১০০-১৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন জানান, পৃথক দুটি মামলায় প্রায় ৪০০ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। রোববার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।

নোয়াখালীর হাতিয়ায় মন্দির ও বসতঘরে দুই দিন ধরে চলা হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত মামলা হয়েছে ছয়টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ২৯৩ জনকে।

আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক নেতার অনুসারী ছাড়াও জামায়াত-শিবিরের সমর্থকদের নামও রয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “বাদীদের লিখিত অভিযোগই মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।”

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে গত ১৩ অক্টোবর রাতে বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২ হাজার ৯৫০ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে এসব হামলার ঘটনা তদন্তের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন সারোয়ারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন জেলা প্রশাসক। আর চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কুমিল্লা নগরে উত্তেজিত জনতার বিক্ষোভ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাঙচুর এবং ফেসবুকে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ চারটি ও র‌্যাব বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। 

এসব মামলায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জামায়াতের ৩ কাউন্সিলরসহ এজাহারনামীয় ৬২ জন ও অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন আরো ৫০০ জন। এর মধ্যে পুলিশ ৩৯ জনকে ও র‌্যাব একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে নানুয়াদিঘির পাড়ে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন একটি ও জেলা পুলিশ প্রশাসন আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এছাড়া চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়।

এসব মামলার আসামিদের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেক, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ রয়েছে। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

সিলেট নগরের দুটি পূজামণ্ডপে গত শুক্রবার দুপুরে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০০-২৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলার বাদী জালালাবাদ থানার এসআই কাজী জামাল।

সিলেটের জকিগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারে বুধবার রাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছিল। পুলিশ তিনজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় কালীগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিনটি মন্দিরে ভাঙচুর ও দুটি মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়। হামলায় আরও তিনটি মন্দির আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর এলাকায় তিনটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৮ জনকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্য দু’জনকে ঘটনার দিন আহত অবস্থায় আটক করা হয়েছিল। তারা সুস্থ হলে পরে তাদেরও রিমান্ড চাওয়া হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষায় দুটি পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১০ আসামির মধ্যে ২ জনের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আসামিরা হচ্ছেন: কাওসার আলী ও নাঈম আহমেদ।

এদিকে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টে এক তরুণের 'ধর্ম অবমাননা'র কথিত অভিযোগ তুলে পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, বটতলা ও হাতীবান্ধা গ্রামে অন্তত ২০টি বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। 

রোববার (১৭ অক্টোবর) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।

এছাড়াও ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। রাত ১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে রাতভর উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ। এ সময় আটক করা হয়েছে ২০ জনকে।

Link copied!