• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
মহামারি করোনাকালে

১৫ মাসে ১৫১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০৯:৫৬ পিএম
১৫ মাসে ১৫১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
প্রতীকী ছবি

মহামারি করোনার কারণে প্রায় ১৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই দীর্ঘ সময় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কারণে ১৫১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। 

সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের চালানো এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে সংগঠনটি এসব তথ্য প্রকাশ করে। 

এ সময়  ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও করণীয়’ কাউন্সেলিং অনুষ্ঠানে আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকারসহ নানা বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।

এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘কাজের মাধ্যমে প্রত্যাশা বৃদ্ধি’। এ দিবস উপলক্ষে ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও করণীয়’ শীর্ষক কাউন্সেলিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রকাশিত জরিপের তথ্য মতে, গত বছরের ১৭ মার্চ হতে ২০২১ সালের ৪ জুন পর্যন্ত দেশে ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। 

এর মধ্যে ৭৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজ শিক্ষার্থী ও ২৯ জন মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের বেশির ভাগের বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। যদিও এ সংখ্যা ২০১৮ সালে ১১ জন এবং ২০১৭ সালে ১৯ জন ছিল।

জরিপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিসংখ্যান দেখানো হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দশ বছরে ১১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। যার মধ্যে ৬ জন ছাত্রী ও ৫ জন ছাত্র।

২০১০ সালে ২ জন, ২০১১ সালে ২ জন, ২০১২ সালে ২ জন, ২০১৫ সালে ১ জন, ২০১৭ সালে ১ জন, ২০১৯ সালে ২ জন ও ২০২০ সালে ১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। এই ১১ জনের মধ্যে  ৬ জন অবিবাহিত, ৪ জন বিবাহিত ও একজন তালাক প্রাপ্ত ছিলেন।

এদের মধ্যে প্রথম বর্ষের ১ জন, তৃতীয় বর্ষের ২ জন, চতুর্থ বর্ষে ১ জন, স্নাতকোত্তরের ৩ জন এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ৩ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।

এতে আরও দেখা যায়, তিন জন ক্যাম্পাসে, ২ জন স্বামীর বাসায়, ৩ জন মেসে এবং ৩ জন বাড়ির বাইরে আত্মহত্যা করেন। যার মধ্যে ৭ জন গলায় ফাঁস দিয়ে, ২ জন উঁচুস্থান থেকে লাফিয়ে, ১ জন বিষক্রিয়ায় এবং ১ জন পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করেন।

জরিপে আত্মহত্যা প্রতিরোধে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগ এবং আবাসিক হলগুলোতে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাদার সাইকোলজিস্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগ এবং প্রতিটি আবাসিক হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা।

উক্ত অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক (মনোবিজ্ঞানী) ইফরাত জাহান আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকারসহ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।

আত্মহত্যার কারণ হিসেবে পড়াশোনার চাপ, বেকার সমস্যা, বৈবাহিক সমস্যা, প্রেমে ব্যর্থ, মানসিক নির্যাতন, পারিবারিক সমস্যা, অবসাদ ও বিষন্নতাকেই প্রধানত চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের চালানো এক জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক (মনোবিজ্ঞানী) ইফরাত জাহান বলেন, “প্রতি বছর ৭ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে ৭৭% ঘটনা মধ্যম আয়ের দেশে সংগঠিত হয়। বাংলাদেশ এর মধ্যে অন্যতম। আবার দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।”

এছাড়া মহামারিতে এ প্রবণতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা নিয়ে এখনই সচেতনতার উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!