সিলেটের ওসমানী নগর এলাকার একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের লক ভেঙে টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা। ভারতীয় মেগা সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে টাকা লুটের পরিকল্পনা ও এটিএম মেশিন ভাঙার কৌশল রপ্ত করে তারা।
মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট করা ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা, দুইটি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি, একটি প্লাস ও মাথায় ব্যবহৃত তিনটি কাপড়ের টুকরা জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— মো. শামীম আহাম্মেদ, নূর মোহাম্মদ সেবুল ও মো. আব্দুল হালিম। বুথের টাকা লুটের সঙ্গে জড়িত একজন এখনো পলাতক রয়েছেন।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির (উত্তর) যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।
হারুন-অর-রশীদ জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৩টার দিকে ওসমানী নগরের শেরপুর নতুন বাজার এলাকার হাজী ইউনুস উল্ল্যাহ মার্কেটের নিচ তলায় থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের এটিএম বুথের দরজা ও মেশিনের লক ভেঙে ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা। এ সময় তারা বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাহারাদারকে মারধর করে হাতে ও মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে রাখে। এই ঘটনায় ওই দিনই ওসমানী নগর থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
ডিবির এই কর্মকর্তা আরো জানান, তদন্তের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ও হবিগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এতে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মনিরুল ইসলাম।
হারুন-অর-রশীদ আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রয়েছে। এটিএম বুথের টাকা লুটের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন গ্রেপ্তারকৃত মো. শামীম আহাম্মেদ। তিনি দীর্ঘদিন ওমান প্রবাসী ছিলেন। দেশে আসার পর তিনি নিয়মিত ভারতীয় মেগা সিরিয়াল সিআইডি দেখতেন। এই সিরিয়াল দেখেই তিনি এটিএম বুথের টাকা লুটের পরিকল্পনা ও মেশিন ভাঙার কৌশল রপ্ত করেন। এরপর তিনি তার অন্য সহযোগীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার হারুন আরো জানান, বুথের টাকা লুটের সময় যাতে চেহারা চেনা না যায় এ জন্য গ্রেপ্তারকৃতরা মুখে মাস্ক ও মাথায় গোলাপি রংয়ের কাপড় বেঁধে ক্যাপ পরিধান করে। এছাড়া বুথের সিসিটিভি ক্যামেরায়ও কালো রংয়ের স্প্রে করে ঝাপসা করে দেয়। এরপর শাবল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি দিয়ে এটিএম বুথের মেশিন ভেঙে টাকা লুট করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা লুট করা টাকা দিয়ে জুয়া খেলে প্রায় ১৪ লাখ টাকা উড়িয়ে দেয় বলে জানান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। তাদের বিরুদ্ধে আগেও অন্যান্য থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়া পলাতক আরেক আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে জানান তিনি।