প্রকৃত আসামি ধরতে দেশের সব কারাগার ও থানায় ক্রমান্বয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে নাশকতার মামলায় ভুল আসামি জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এই আদেশ দেন।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তিনটি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে সব থানায় আসামির হাতের আঙুল ও তালুর ছাপ, চোখের মণি, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির প্রচলন।
এর আগে গত সপ্তাহে নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর বসুরহাটের মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নয় মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয় পিবিআই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
গত বছরের ১০ মার্চ হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এক আদেশে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করেন।
একই সঙ্গে নোয়াখালীর জহির উদ্দিন ওই মামলার প্রকৃত আসামি কি না, তা তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাধারী ব্যক্তি নয়। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল দায়ের হওয়া মামলায় (নম্বর-১২(৪)১৩) পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার আজগর আলী মোল্লা বাড়ি মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেন। এরপর ওই বছরের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের জামিন পেয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যান। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন।
এদিকে পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ অবস্থায় জহির উদ্দিন তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন।