রেকর্ডের কমতি নেই যে শহরের, তার নাম ঢাকা। সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা কিংবা অন্যান্য পরিবেশে এই শহরের অবস্থান দিনে দিনে শুধু অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। শেষ বাসযোগ্য শহরের প্রকাশিত তালিকায় ঢাকার অবস্থান রয়েছে তলানিতে। বৈশ্বিক অবাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান সপ্তম।
বুধবার (২২ জুন) প্রকাশিত দ্য ইকোনমিস্টের সহযোগী সংস্থা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রকাশিত ২০২২ সালের জন্য বৈশ্বিক বাসযোগ্য শহরের তলানিতে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭২ শহরের উপরে বসবাস উপযোগিতা গবেষণা করা হয়। এতে শহরগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, অপরাধের হার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামোগত অবস্থা ও সবুজ পরিবেশের মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়। এই ছয়টি মানদণ্ডের হারের ভিত্তি করে র্যাঙ্কিং নির্ধারিত হয়।
সে হিসেবে বাংলাদেশের রাজধানীর অবস্থার বাসযোগ্য শহরগুলোর একেবারে তলানিতে। বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ১৭২টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৬তম। ২০২১ সালে তলানিতে ছিল ঢাকা। সেই তালিকায় বিশ্বের ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৭তম।
গবেষণার ফলাফল বলছে, অবসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। শহরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার হারের মানদণ্ড ৫৫ দশমিক শূন্য, সংস্কৃতি ও সবুজ পরিবেশের হার ৪০ দশমিক ৫, শিক্ষার হার ৪১ দশমিক ৭।
তলানিতে রয়েছে ঢাকার সঠিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবার মানদণ্ড। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মানদণ্ডে ঢাকার হার ২৬ দশমিক ৮ ও স্বাস্থ্যসেবায় ২৯ দশমিক ২। আর মোট ১০০ সূচকের মধ্যে ঢাকার এবারের স্কোর ৩৯ দশমিক ২। যা গত বছর ছিল ৩৩ দশমিক ৫।
অবাসযোগ্য শহরের প্রথম স্থানে রয়েছে যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। দ্বিতীয় নাইজেরিয়ার লাগোস, তৃতীয় লিবিয়ার ত্রিপোলি, চতুর্থ আলজেরিয়ার আলজেরিস, পঞ্চম পাকিস্তানের করাচি, ষষ্ঠ পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মর্সবয়ে, সপ্তম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, অষ্টম জিম্বাবুয়ের হারারে, নবম ক্যামেরুনের দৌয়ালা ও শেষ দশম স্থানে রয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান।
বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার নাম। গত বছর বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে ছিল নিউজিল্যান্ডের শহর অকল্যান্ড। এ বছর সে স্থান দখল করেছে ভিয়েনা। আর অকল্যান্ড চলে গেছে ৩৪তম অবস্থানে। ভিয়েনা ১২তম অবস্থান থেকে উঠে এসেছে শীর্ষে।
বসবাসযোগ্য শীর্ষ ১০টি শহরের মধ্যে ৬টিই ইউরোপের। শহরগুলো হচ্ছে, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ও জেনেভা, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম। এছাড়া শীর্ষ দশে রয়েছে কানাডার ক্যালগারি, ভাঙ্কুভার ও টরন্টো, জাপানের ওসাকা ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন।
২০২৩ সালে বেঁচে থাকার বৈশ্বিক ঝুঁকি
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, করোনার প্রভাবের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ সহ্য করতে হবে বিশ্বকে। ২০২৩ সালে শহরগুলোতে জীবনযাত্রা প্রভাবিত হবে। মহামারি এখনো শেষ হয়নি। আমাদের মূল অনুমান হলো, এই বছরের শেষের দিকে করোনার নতুন ঢেউ শুরু হতে পারে। এটি ডেল্টার চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হবে। বর্তমান ভ্যাকসিনগুলোর বিরুদ্ধে খুব একটা প্রতিরোধী হওয়ার শঙ্কা নেই।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় উচ্চ ও মধ্যম আয়ের শহরগুলোতে সামাজিক বিধিনিষেধ লঙ্ঘিত হবে। বিকল্প হিসেবে মানুষের মধ্যে ফের টিকা প্রয়োগ করা হবে। যা আবার বসবাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত করবে। যাদের কম টিকা দেওয়ার হার ও দুর্বল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তারা প্রভাবিত হওয়ার শঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
এদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধ অন্তত আগামী বছরজুড়ে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে থাকবে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের আশঙ্কা ২০২২ সালের মধ্যে যুদ্ধ আরও সক্রিয় রূপ নেবে। ফলে এই দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকবে। সংঘাতের ফলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে আসবে।
ইকোনমিস্টের এই সহযোগী সংস্থার শঙ্কা, জ্বালানি ও খাদ্যের মতো উচ্চ বৈশ্বিক পণ্যের দাম সামনের মাসগুলোতে আরও বাড়বে। যা অনেক শহরে বসবাসযোগ্যতার উপর বড় রকমের প্রভাব ফেলবে। অনেক শহরে সংঘর্ষের সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটে স্থিতিশীল শহরগুলোর অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক জীবনে বিনিয়োগ কমে আসতে পারে।