বিদেশে পাঠানোর কথা বলে মানুষের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আবুল কালাম (৪১)। সংঘবদ্ধ মানব পাচার ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। এ সময় তার কাছ থেকে পাসপোর্ট, জাল ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড জব্দ করা হয়।
সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “রোববার (১৭ জুলাই) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীর ছাগলনাইয়া এলাকায়। তিনি মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। মানুষকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে জাল ভিসা ও বিএমইটি কার্ড দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন তিনি। তার কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, নকল বিএমইটি কার্ড ৬টি, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রার এবং ডায়েরি উদ্ধার করা হয় হয়েছে।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে বিভিন্ন বয়সী মানুষ পাঠিয়ে আসছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক বেকার যুবক ও নারীদের কাছ থেকে ৫ হতে ৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিতেন। এরপর তিনি ভুয়া ভিসা এবং নকল বিএমইটি কার্ড ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিতেন। ভুক্তভোগীরা নকল ভিসা এবং নকল বিএমইটি কার্ড নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়।”
গত তিন বছরে তিনি অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছেন। যারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অন্যদিকে তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ৫-৭ লাখ টাকা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কালাম।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন আবুল কালাম। তিনি ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দর্জি হিসেবে কাজ শুরু করেন। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তারপর তার এলাকায় দর্জি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে প্রেরণ এবং প্রতারণা শুরু করেন। প্রথমে তিনি ভিকটিমদের ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে থাকে। তারপর ভিসা, টিকিট, মেডিকেল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকেন।”