সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি জাল করার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. গোলাম মোস্তফা (৬০), মো. জালাল বাশার (৫৪), মো. মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মো. মিনারুল ইসলাম ওরফে মিন্নি (২২) ও মো. তারেক মৃধা (২১)। সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, শাহজাহানপুর ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব–৩।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
র্যাব জানিয়েছে, এই চক্র গত ৮–১০ বছর ধরে এসব জাল–জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জালিয়াতিতে জড়তি থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালিয়াতি করছিলেন গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। বিজ্ঞাপনটি র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেলের নজরে এলে তারা অনুসন্ধান শুরু করে। ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য ৮–১০ হাজার টাকা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৩–৪ হাজার টাকা নিত প্রতারক চক্র।”
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে দুটি কম্পিউটার, ২ হাজার ৪৬০টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের জাল সনদ প্রাপ্তিস্বীকার রসিদ, ২৬টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, ২টি রিল সিকিউরিটি লেমিনেটিং পেপার, যা দিয়ে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়, একটি কার্ড প্রিন্টার, চারটি সফটওয়্যার সিডি, চারটি পেনড্রাইভ, পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২৮ হাজার টাকা জব্দ করেছে র্যাব।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, “প্রতারক চক্রের প্রধান গোলাম মোস্তফা। একই ধরনের প্রতারণায় তার বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। তিনি জেলেও ছিলেন কয়েকবার। উচ্চমাধ্যমিক পাস গোলাম মোস্তফা প্রায় ৩০ বছর আগে ঢাকায় আসেন। প্রথমে এক্স–রে মেশিনের টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। পরে নিজেই ছোটখাটো একটা দোকান দিয়েছিলেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি প্রতারণায় জড়ান। গোলাম মোস্তফার বেশ কয়েকটি লেগুনা গাড়ি আছে “
খন্দকার আল মঈন বলেন, “দলের বাকি সদস্যদের মধ্যে মিনারুল টেক্সটাইল ডিপ্লোমা পাস করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্সে গ্রাফিক্স ও অন্যান্য নকশার কাজ করতেন। মুসলিম আগে লেগুনার চালক ছিলেন। ৮-১০ বছর ধরে তিনি পুরোনো মোটরসাইকেল কেনাবেচাসহ বিআরটিএ ও নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে লোকজনকে সংগ্রহ, যোগাযোগ ও কার্ড তৈরির পর সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতারণার কাজ করতেন। জালাল প্রথমে প্রেসে কাজ করতেন। পরে আদালতের সামনে দালালি করতে শুরু করেন। তিনিও এই চক্রের সঙ্গে পাঁচ–সাত বছর ধরে জড়িত। তারেক বছরখানেক এই প্রতারণায় জড়িয়েছেন।”