জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট। এ জন্য সকালে রাজধানী থেকে ছাড়েনি দূরপাল্লার কোনো বাস। আর বাস না চলায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
আজ সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস টার্মিনালে প্রবেশ করলেও ঢাকা থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। কাউন্টারগুলোর সামনে ও মূল সড়কে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো বাসেই যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না।
এছাড়া কাউন্টারের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, বাসের কুলি-হেলপারসহ শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। কাউন্টার খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি হচ্ছে না।
পরিবহন ধর্মঘটের কথা জানতেন না সাতক্ষীরা যেতে চাওয়া শামসুল হুদা। গাবতলী টার্মিনালে গিয়ে জানতে পারেন বাস চলছে না।
শামসুল হুদা বলেন, “বাড়ি যেতেই হবে। পারিবারিক সমস্যা। কিন্তু বাস চলছে না। আগে জানলে বিকল্প ব্যবস্থা করতাম। এখন ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।”
গাবতলী বাস টার্মিনালের হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজার জাকির মল্লিক বলেন, “সরকার হঠাৎ ডিজেলের দাম বাড়িয়েছে। এর আগে গ্যাসের দামও বেড়েছে। তেলের দাম বাড়ার কারণে গাড়িপ্রতি যেখানে খরচ হতো ২০ হাজার, সেখানে এখন খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা। লোকসান করে তো আর বাস চালানো যায় না। তাই ফেডারেশন ধর্মঘট ডেকেছে। এতে সাধারণ মানুষও যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি পরিবহন খাতও ক্ষতিগ্রস্ত। তাই দাম কমানো না হলে বাস চালানো সম্ভব না।”
ফরিদপুর-বরিশাল-গোপালগঞ্জ-কুয়াকাটা রুটে চলাচল করা অপর একটি বাসের গাবতলী কাউন্টার মাস্টার বলেন, “তেলের দাম বাড়ার কারণে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ধর্মঘট ডেকেছেন। কাউন্টারে যাত্রীরা আসছেন, কিন্তু টিকিট বিক্রি হচ্ছে না, ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে হয়তো দুপুরে আবারও শুরু হবে বাস চলাচল।”
ট্রাক ও পণ্যবাহী পরিবহনের মালিকরা ধর্মঘটের ডাক দিলেও বৃহস্পতিবার সারা দিন বাস ধর্মঘটের বিষয়টি ধোঁয়াশা ছিল। তবে রাতে এ বিষয়টি পরিষ্কার করে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
সংগঠনটি জানায়, পণ্যবাহী যানের পাশাপাশি শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বাস চলাচলও বন্ধ রাখবেন মালিকরা। তবে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘটের ডাক দেয়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, “পরিবহন মালিকরা গাড়ি চালাবেন না। তাদের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না দিলেও গাড়ি বন্ধ থাকবে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে।”
এছাড়া বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ বলেন, “শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দিইনি। কিন্তু মালিকরা গাড়ি চালাবেন না। আঞ্চলিক কমিটিগুলো বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিচ্ছে।”
তবে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও কার্যালয় থেকে অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবেই ধর্মঘটের ডাক দেন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংক লরি-প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান।
বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সভা করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। অতিরিক্ত দামে ডিজেল কিনে পরিবহন চালাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মালিকরা। সে ক্ষেত্রে ভাড়া সমন্বয়ের দাবি ওঠে। ডিজেলের দাম কমানো, নতুবা ভাড়া সমন্বয়ের দাবি ওঠে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে। দাবি পূরণ না হলে পরিবহন চালানো সম্ভব নয় বলে জানান তারা। তাদের সঙ্গে একমত হন পরিবহন শ্রমিক নেতারা।