সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের শিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ঝুমন দাসের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। উদীচীর শিল্পীদের প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়।
উদীচী’র সহ-সাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমাম বলেন, “গত ১৭ মার্চ সুনামগঞ্জের শাল্লায় নোয়াগাও হিন্দু পল্লীতে সম্প্রদায়িক হামলা চালায় মৌলবাদী গোষ্ঠী। অন্যদিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার অজুহাতে ঝুমন দাসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭বার আবেদন করেও ঝুমন দাসের জামিন পাওয়া যায়নি। অথচ যারা হামলার সঙ্গে জড়িত, তারা প্রত্যেকেই জামিনে এখন মুক্ত। অন্যায়ভাবে ঝুমন দাসকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাই আমরা ঝুমন দাসের নিঃশর্ত মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের সকল ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে ১১ মাসের সন্তান সৌম্য দাসকে নিয়ে শাহবাগে এসেছেন ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি রানী দাস। স্বামীর মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা কেউ জানেন না, আমি নিজেও নির্যাতিত। আমার সংসার কীভাবে চলে, সেটা তো আপনারা জানেন না। আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে নিরুপায় হয়ে আজকে এখানে এসেছি। আমি ও আমার বাচ্চার কতোটা কষ্ট হচ্ছে, সে আমি জানি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী সবার সুদৃষ্টি কামনা করে সুইটি আরো বলেন, “আমি সরকারের কাছে এই আশা করছি, আমার স্বামীর দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক। তাকে নিয়ে আমি আর কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না।”
ঘটনার দিন স্মরণ করে ঝুমন দাসের স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার সময় বলা হয়েছে, নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি এটা জানি না যে, আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হবে। ৭ বার আবেদনের পরও আমার স্বামীর মুক্তি মেলেনি। কী অপরাধ ছিল আমার স্বামীর? আমি দিন দিন আমার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলছি। কোন সময় কোন কথা বলতে হবে, সেই ভাষাটুকু আমার নেই।” এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
উদীচী’র সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমামের সঞ্চালনায় এসময় আরো বক্তব্য রাখেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিন্যু কিবরিয়া ইসলাম, বাংলাদেশ যুব উন্নয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাছুম, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী এফ এম শাহীন, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আবদুল্লাহ কাফি রতন, ইমতিয়াজ মাহমুদ, ছাত্রনেতা আকরামুল হক ইকবালুল হক খান প্রমুখ।
এছাড়া উদীচীসহ প্রাচ্যনাট, বটতলা, থিয়েটার ৫২সহ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গান ও নাটক পরিবেশন করে ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করেন।