রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে সম্প্রতি আল আমিন নামের এক যুবলীগ কর্মী খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গ্রেপ্তাররা হলেন মোহাম্মদ আলী, খাজা, আমজাদ হোসেন, হুমায়ুন কবির রাসেল এবং মাসুদ আলম। এ সময় মারামারির কাজে ব্যবহৃত বড় ছোরা, চাপাতি ও ডিস্ক কুড়াল, লোহার রডসহ দেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়।
ডিবি জানায়, মূলত বস্তিতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে যুবলীগ কর্মী আল আমিনকে খুন করা হয়। মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাদের খান ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল মফিজুর রহমান গ্রুপের মধ্যে বস্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। ফলে আল আমিনকে এর বলি হতে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, “কড়াইল বস্তিতে কমিটি গঠন এবং বিভিন্ন বিষয়ে চাঁদাবাজিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। আল আমিন হত্যায় পাঁচজনকে ২২ ও ২৩ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।”
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, “কড়াইল বস্তির বিভিন্ন ইউনিট আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন এবং এর মাধ্যমে বস্তির ঘরভাড়াসহ অবৈধভাবে বিভিন্ন ইউটিলিটি সেবার অর্থ আদায় নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৭ আগস্ট রাতে বস্তির এরশাদ মাঠ এবং নূরানী মসজিদ এলাকায় নুরু-কবির-আলী গংয়ের সঙ্গে রিপন-জুয়েল-শুভ গংয়ের মারামারির ঘটনায় আল আমিন মারা যান। এছাড়া এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ১০ জন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আরও অনেকে আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।”
ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “মূলত টিঅ্যান্ডটি, গণপূর্ত ও ওয়াসার জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪০ হাজার ঘর। এসব ঘর অবৈধভাবে নির্মাণ, বরাদ্দ এবং হস্তান্তরে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। ঘরগুলোতে অবৈধভাবে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি চলে আসছে দীর্ঘদিন। এ ছাড়া ডিস সংযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ, ময়লা-বাণিজ্য প্রভৃতির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও টাকা তোলা হয়। রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ছত্রচ্ছায়ায় এ চাঁদার টাকা তোলে এবং ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়।”
ডিবি প্রধান বলেন, “দুটি গ্রুপ এই চাঁদাবাজি করে থাকে। এই চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েই প্রায় প্রতিবছর খুনোখুনি হচ্ছে। এসব হত্যাকাণ্ডে যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”