অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, “কর দেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে জনগণের। সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়োজিত ‘সেরা করদাতা সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড’ অনুষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। সম্মানিত সর্বোচ্চ করদাতাদের সম্মাননা দেওয়া শুধু একটি পুরস্কারই নয়, এটি একটি স্বীকৃতি, একটি উৎসাহ, একটি অনুপ্রেরণা।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) অফিসার্স ক্লাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয়োজিত সেরা করদাতাদের ‘ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গঠন করে এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ধারাবাহিক উন্নয়নের ভিত রচনা করেছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারকে যে উন্নয়ন ব্যয় করতে হয় তার মূল যোগান আসে রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে। ১৯৭২-৭৩ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল। যা সময়ের পরিক্রমায় আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর তুলিতে আঁকা সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ আরও অনেক বাড়াতে হবে। এদেশের সম্মানিত করদাতাদের টাকায় আজ নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রাণশক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে জনগণের স্বতর্স্ফূত অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ার নব্য টাইগার হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। আমাদের এখন লক্ষ্য এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি অর্জন ও বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। ২০৪১ সালের সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার জন্য সঠিক অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করে দেওয়া।”
মন্ত্রী বলেন, “উন্নয়ন অভিযাত্রাকে সফল করতে আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদের যোগান বাড়াতে হবে। রাজস্ব অনুপাত এখনও আমাদের প্রতিবেশী ও উন্নয়ন প্রতিযোগী অনেক দেশের তুলনায় কম। এ বিষয়ে আমাদের আরো কাজ করতে হবে।”
মুস্তফা কামাল বলেন, “২০০৫-০৬ সালে এনবিআর এর রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা থেকে সাড়ে সাত গুণেরও বেশি বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত এক যুগে আয়করের পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বার গুণ বেড়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে একটি করদাতা বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে। করদাতার সংখ্যাও প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে। ফলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ সময় ২০২০-২১ অর্থবছরের সেরা করদাতা হিসেবে বিশেষ সম্মাননা ‘ট্যাক্স কার্ড’-এর জন্য ১৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সর্বোচ্চ ও দীর্ঘসময় আয়কর দেওয়া ৫২৫ জন ‘সম্মানিত করদাতা’ সম্মাননা পেয়েছেন। ট্যাক্স কার্ডের জন্য ব্যক্তি শ্রেণিতে ৭৫ জন, কোম্পানি ক্যাটাগরিতে ৫৪ ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১২ করদাতাকে সম্মাননা দেওয়া হয়।