অবৈধ পথে ইলিশ পাচাররোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভায় রেজাউল করিম এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সভায় সভাপতিত্ব করেন।
মন্ত্রী বলেন, “নিষিদ্ধ সময়ে যারা মাছ ধরতে নামে তারা সবাই মৎস্যজীবী নয়। তাদের নেপথ্যে অনেক ধনী ব্যক্তি থাকে, ক্ষমতাবান ব্যক্তি থাকে। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় অতীতের মতো এবারও এসব অসাধু ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হবে না।”
ইলিশ সম্পদ ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “দিনে অভিযানের পাশাপাশি এবার রাতেও অভিযান জোরদার করা হবে।”
সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় বরফকল বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।
রেজাউল করিম বলেন, “গত বছরের মতো এবারও অবৈধ জাল উৎপাদনস্থলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইলিশ সম্পৃক্ত জেলা-উপজেলায় নদীতে ড্রেজিং বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে যা যা করা দরকার তা করতে হবে বলে তিনি জানান।
মাছ ধরা বন্ধকালে যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধিত জেলেদের নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় দাবি করে তিনি আরও বলেন, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। রাষ্ট্র নানাভাবে তাদের সহায়তা করছে।”
অতীতে এতো ইলিশ উৎপাদন হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “সরকারের নানাবিধ উদ্যোগে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে গ্রাম-গঞ্জে এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছে। ইলিশ রপ্তানিও করা যাচ্ছে।”
মন্ত্রী আরও বলেন, “প্রজননস্থলে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের করা হলে ইলিশের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারী যানবাহন চলাচল, যানবাহনের পোড়া মবিল নির্গত হওয়া, ময়লা-আবর্জনা নির্গত হওয়ায় কারণে ইলিশের প্রজনন পরিবেশ নষ্ট হয়। ফলে ইলিশ ওই অঞ্চলে থাকে না। অন্যত্র চলে যায়।”
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, মো. তৌফিকুল আরিফ, এ টি এম মোস্তফা কামাল ও মো. আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের পরিচালক মো. মনজুর হাসান ভুঁইয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, র্যাব, নৌপুলিশ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক, মৎস্য বিজ্ঞানী, ইলিশ সম্পৃক্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা, ওয়ার্ল্ড ফিশের প্রতিনিধি, মৎস্যজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময়ও নিষিদ্ধ থাকবে। নিষিদ্ধকালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে। এ সময় ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের সরকার ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেবে।