ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি) ও আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্সে (এএফডাব্লিউসি) অংশগ্রহণকারীদের অর্জিত জ্ঞান তাদের নিজ নিজ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বঙ্গভবনের দরবার হলে এনডিসি ও এএফডাব্লিউ কোর্স-২০২১ এর গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “এনডিসির কোর্স আপনাদেরকে দেশ সেবায় অনেক দূর এগিয়ে দেবে এবং অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।”
সফলভাবে কোর্স সম্পন্ন করায় কোর্স সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমার বিশ্বাস যে, জাতীয় নিরাপত্তা থেকে জাতীয় উন্নয়ন, নীতি প্রণয়নে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এটি একটি অনন্য সাধারণ কোর্স যা আপনাদের পেশাগত জ্ঞান সমৃদ্ধ করবে এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাকে আরও আস্থাবান করে তুলবে।”
আব্দুল হামিদ বলেন, “২০২১ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী বছর, কারণ এ বছর দেশ দুটি মেগা ইভেন্ট-স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং দেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে।”
এ ছাড়া আবদুল হামিদ সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এনডিসিতে গুরুত্বপূর্ণ কোর্সে যোগদান ও সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ১৩টি দেশের ২৭ জন বিদেশী অংশগ্রহণকারীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এনডিসি বেসামরিক অঙ্গনেও সমানভাবে গৃহীত ও প্রশংসিত হচ্ছে।”
আব্দুল হামিদ আরো বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেসামরিক প্রশাসনের বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অসাধারণ অবদান রাখছেন। কোর্সের মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েটেরা জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় উন্নয়ন, নেতৃত্ব এবং নীতিনির্ধারণের বিভিন্ন দিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন সমস্যা এবং এর সমাধানের বিষয়েও অধ্যয়ন করছে।”
এছাড়া এনডিসি বাংলাদেশের মান এবং ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পররাষ্ট্র নীতি সারা বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও বজায় রাখার লক্ষে নিরলসভাবে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছে।
দেশের চলমান উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবেলা, পরিবেশ দূষণ এবং জীববৈচিত্র্যের অনুকূল পদক্ষেপ গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র দূরীকরণ এবং ধরিত্রীর সুরক্ষা এবং সকলের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে স্থিতিশীল পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতিসংঘের ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কারে’ ভূষিত হয়েছেন, রাষ্ট্রপতি এটিকে সকলের জন্য অত্যন্ত গর্বেরও বিষয় বলে উল্লেখ করেন।
বর্তমান বিশ্ব উদ্ভাবন, পরিবর্তন এবং অগ্রগতির দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বর্তমানে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং জাতীয় উন্নয়নের মত বিষয়গুলো জাতীয় নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অবশ্যই রাষ্ট্রের প্রচলিত নিরাপত্তার ধারণার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি ও জাতীয় উন্নয়ন সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।”
এর আগে আবদুল হামিদ তার বক্তৃতার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী শহীদ ও এই মাটির বীর সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অনুষ্ঠানে এনডিসি কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রপতি এখানে একাধিক ফটোসেশনে যোগ দেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিব, উচ্চপদস্ত বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, অনুষদ, স্টাফ অফিসার এবং এনডিসি ও এএফডব্লিউসি’র কোর্স সদস্যরা।
সূত্র: বাসস।