• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন


নুর মামুন
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০৯:৫৭ এএম
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবন

চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ১১টায় ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মেডিকেল বোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মামুন মোস্তাফী তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

বহুমাত্রিক কর্মময় জীবনের অধিকারী জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন একজন ভাস্কুলার সার্জন। তিনি মূলত জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি দেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, ওই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

ডা. জাফরুল্লাহ মহান মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করেছেন সম্মুখ সমরে। মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক ও সংগঠক জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন। দশ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ছাত্র ইউনিয়নের মেডিকেল শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।

১৯৬৭ সালে রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন। ব্রিটেনে প্রথম বাংলাদেশি সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএমএ) প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিনি। পরবর্তীকালে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামের স্বাস্থ্যবিষয়ক এনজিও। যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব শ্রেণির লোকদের মধ্যে, বিশেষ করে কম আয়ের মানুষদের মধ্যে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে।

১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ঘোষণার ক্ষেত্রে ডা. জাফরুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশীয় ওষুধ শিল্পের যে বিকাশ, তা সেই বৈপ্লবিক ওষুধ নীতিরই সুফল। এখন ১৬-১৭ কোটি মানুষের চাহিদার ৯৫ শতাংশেরও বেশি ওষুধ বাংলাদেশ উৎপাদন করে। বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানিকারক দেশও।

১৯৮১ সালে অত্যাধুনিক ‘গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল’ গড়ে তোলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। অন্য সব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ওষুধের চেয়ে গণস্বাস্থ্য উৎপাদিত ওষুধের দাম প্রায় অর্ধেক। তিনি নিজে কিডনির রোগী। ডায়ালাইসিস করেন সপ্তাহে প্রায় তিনবার। আর কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্যে অপরিহার্য ইনজেকশন ‘হ্যাপারিন’। সেই ওষুধের দামও অন্য যেকোনো কোম্পানির থেকে অনেক কম। শুধু হ্যাপারিন নয়, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালে উৎপাদিত প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম অন্য কোম্পানির তুলনা অনেক কম। এছাড়া দেশে কিডনি ডায়ালাইসিসের খরচ যেখানে আকাশ ছোঁয়া, সেখানে বিশেষ আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় এই সেবা প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ১০-১২ শতাংশ দরিদ্র রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সর্বশেষ কোভিড মহামারিতেও গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল বিশেষ কিট তৈরি করে।

১৯৭৭ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এছাড়া ১৯৮৫ সালে ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই, ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড, ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কারও পান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

Link copied!