এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় সাভারের আশুলিয়া ও জিরানি শিল্প এলাকায় ১১১টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া গাজীপুরের ৩টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে ৫৪টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। আর ৫৭টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজিএমইএর একজন সহ-সভাপতি গণমাধ্যমকে জানান, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার বিকেলে আশুলিয়ায় পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে সংগঠনের নেতাদের বৈঠকের কথা রয়েছে। বিজিএমইএর নেতারা মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) পর্ষদ সভা করে বুধবার কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তবে নেতাদের একটি অংশ আশুলিয়ার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রম আইনের নির্দিষ্ট ধারায় কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী আজকে কারখানা খোলা হয়নি।
সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বুধবার সকালে নির্দিষ্ট সময়ে অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কারখানায় উপস্থিত হওয়ার পরও কাজ না করায় ৫৭টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় ৫৪টি কারখানা বন্ধ করা হয়। অর্থাৎ এসব কারখানার শ্রমিকেরা কাজ না করলে মজুরি পাবেন না।
এদিকে মঙ্গলবার অধিকাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিলেও দুপুরের পর অনেক কারখানায় অসন্তোষ দেখা দেয়। ৩২টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকেন। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করলে তারা বেরিয়ে যান।
কারখানা মালিকরা জানান, এরই মধ্যে শ্রমিকদের বেশকিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আশুলিয়ায় ৪২টি কারখানা বন্ধ ছিল। এ ছাড়া গাজীপুরের ২৫টি কারখানায় কাজ হয়নি শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে। এছাড়া বেতনের দাবিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এখানে বেতন দেওয়ার কথা ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, অর্থ নগদ করাতে না পারায় শ্রমিকদের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। আশুলিয়ার জিরাবো, নিশ্চিন্তপুর, নরসিংহপুর, সরকার মার্কেট, জামগড়া, বাইপাইলসহ আশপাশ এলাকায় ছিল যৌথ বাহিনীর টহল। সকালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করেন। তবে কিছু কারখানার ফটকে লাগানো রয়েছে বন্ধের নোটিশ।
জানা যায়, শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছে। কিছু কারখানায় শ্রমিক-মালিকের মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনা ফলপ্রসূ হলে সেখানে পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তা জানান, শ্রমিকরা এমন কিছু দাবি উপস্থাপন করছেন, যা মেনে নেওয়া কঠিন।
এ বিষয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, “যারা পারছেন, তারা কারখানা চালাচ্ছেন। আর যারা পারছেন না, কারখানা ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন।”
সারোয়ার আলম আরও বলেন, “শ্রমিকরা হঠাৎ করে আন্দোলনে নেমেছে। বিভিন্ন স্থানে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ।”
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “সোমবারের (৯ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে শ্রমিকদের চারটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। টিফিন বিল ও হাজিরা ভাতা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য রাখা হবে না, যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। আর কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করলে, তার ব্যাপারে রেস্ট্রিকশন থাকবে না, যাতে সে অন্যত্র সহজে চাকরি পেতে পারে।”
শ্রমিকদের অভিযোগ, সরকার ২০১৮ সালে শ্রমিকদের বেতনের গেজেট প্রকাশের পর ২০২৩ সালে সেটি সংশোধন করে। এতে শ্রমিকদের দক্ষতা অনুযায়ী এ, বি, সি ক্যাটেগরিতে বেতন নির্ধারিত হয়। কিন্তু ওই গেজেট অনুযায়ী তারা বেতন পাচ্ছেন না।
সূত্র : সমকাল