• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নারী উদ্যোক্তা সাদিয়ার সাফল্যের গল্প


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম
নারী উদ্যোক্তা সাদিয়ার সাফল্যের গল্প

পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ঘুরে অনেকই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ছেন। এতে সাফল্যও পাচ্ছেন অনেকে। সেরকই একজন উদ্যোক্তা সাদিয়া খান। স্বরূপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে তার। অনলাইনের পাশাপাশি সরাসরিও গ্রাহকের কাছে শাড়ি পৌঁছে দিয়ে থাকেন। তাঁতের শাড়ি, জামদানি শাড়ি, মনিপুরী শাড়ি নিয়ে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছেন। এ সময়ের মধ্যে চাকরি, পড়াশোনা করলেও উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলায় কখনো থেমে যায়নি। অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছানোর লড়াইয়ে একাই লড়ে গেছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসব শাড়ি সংগ্রহ করে থাকেন তিনি। এছাড়াও নিজের পছন্দের মতো ডিজাইন দিয়েও তাঁতিদের কাছে থেকে শাড়ি তৈরি করে নিয়ে থাকেন।

সাদিয়া খান বলেন, “আমি যখন পড়াশোনা করতাম, তখন ভাবতাম চাকরি করবো, এই করবো, সেই করবো। এরপর শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় বাইরে কিছু কাজ করা শুরু করলাম। তারপর চাকরির পাশাপাশি নিজের কাছে উপলব্ধি হলো যে নিজে কিছু একটা করা দরকার। যেহেতু আমাদের দেশে নিজে কিছু করার সুযোগ রয়েছে। চাইলেই আমরা করতে পারি। আমাদের দেশে অনেক মেয়ে আছে যারা উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছে পোষণ করেন। এছাড়াও উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পেশায় সচ্ছল থাকতে পারেন।”

এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, “শাড়ি আমাদের দাদী, নানীরা পড়েছেন। আমাদের মা, বোনরাও পড়ে থাকেন। শাড়িই পারে একজন নারীকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে। সেই দিক থেকে আমার শাড়ি খুব পছন্দ। কারো বিয়ে হলে বা ঈদের সময় আমাকেই শাড়ি কেনার দায়িত্ব দিতো। ভরসা জায়গা থেকেই তারা আমাকের দায়িত্ব দিতো। কারণ আমার পছন্দের শাড়ি নাকি সবার ভালো লাগে। এক পর্যায়ে আমার মাথায় আসে, যেহেতু কাজ করার সুযোগ আছে তাই শাড়ি নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করতে পারি। এরপর আমি নিজে শাড়ি নিয়ে কাজ করা শুরু করি। পাশাপাশি আমার এলাকার কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে কাজ করা শুরু করি। যেহেতু শহরে এতো বেশি সুঁই-সুতার কাজ করতে চায় না কেউ, তারপরও বেঁছে বেঁছে কয়েকজনকে নিয়ে নকশি কাঁথার কাজ শুরু করি। যখন নকশি কাঁথার কাজ করি তখন আশেপাশে থেকে বেশ ভালো সাড়া পাই।”

সাদিয়া বলেন, “আমি যখন নকশি কাঁথার কাজ শুরু করি, তখন আমার এসব পণ্য খুব দ্রুত বিক্রি হতে শুরু করে। সেই সময়েই আমার কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তারপর আমি ঠিক করলাম ব্যবসায় থাকবো। আমি চাকরির পাশাপাশি এসএমই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হই। দেড় বছর ধরে এসএমই ফাউন্ডেশনের একজন ইনক্রিউবিটি হিসেবে আছি। ইনক্রিউবিটি হিসেবে আমাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ আছে। এসব ট্রেনিং ভীষণ ফলপ্রসূ। আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। সেই জায়গা থেকে ব্যবসায় আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো।”

সাদিয়া খানের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে কাজের শুরুটা কঠিন ছিল। পরিবারসহ বাইরে নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে তার কাছে পরিবারের চ্যালেঞ্জটাই বেশি কঠিন মনে হয়েছে। কারণ, সাধারণত পরিবারের মেয়েকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক অথবা ব্যাংকার বানানোর চিন্তা থাকে। তবে কোনো চ্যালেঞ্জই তাকে থামাতে পারেনি। পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা আর মেধাকে পুঁজি করে পা বাড়িয়েছেন সাদিয়া। সাফল্য একদিন আসবে এমন আশায় বুক বেঁধে নেমে পড়েন কর্মের সন্ধানে। এই এগিয়ে চলাই আজ তাকে ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তা অদম্য একজন নারী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে এই সমাজে। সাদিয়া নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ স্বাবলম্বী নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি নিজেসহ তার সাথে কাজ করছেন বেকার, বিধবাসহ বেশ কয়েকজন নারী।

তিনি বলেন, “অনেক পরিবার মনে করেন তাদের মেয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, শিক্ষকসহ এ ধরনের প্রফেশনে থাকবে। অথবা কোনো একটা চাকরিতে থাকবে। কিন্তু ব্যবসায় কেন? ব্যবসা হিসেবে মেয়েদের জন্য অধিকাংশ বড় পরিবারের জন্য সামাজিকতা, ধর্মের বিভিন্ন উছিলায় তারা পছন্দ করেন না। আমি প্রথমে আমার মা-বাবার কাছে থেকে সাপোর্ট পাইনি। তারা নিষেধ করতেন। এখনও তারা সাপোর্ট না করলেও আমার কাজ পছন্দ করেন। আমি আশা করি আমার কাজের পরিধি বাড়িয়ে ভালো করতে পারলে খুব সুন্দরভাবেই দেখবে সবাই।”

এক প্রশ্নের জবাবে সাদিয়া খান বলেন, “ব্যবসা নিয়ে আমার একটা লক্ষ্য আছে। যেদিন লক্ষ্য পূরণ হবে সেদিন সবাইকে মাসিক আয়ের তথ্যটা বলবো। আপাতত এই বিষয়ে বলতে চাই না। আমার মূল বিষয় হলো সাফল্য। স্বপ্নচূড়ায় পৌঁছাতে চাই। আমার সফলতার গল্প পড়ে যেন আরও ১০ জন মেয়ে উদ্যোক্তা হওয়ায় ইচ্ছে পোষণ করেন এবং সফলতা অর্জন করেন।”

ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমি দেশের মধ্যে কাজ করতে চাই। এছাড়াও আমার কাজের সাথে অনেকেই যুক্ত হয়ে যেন স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে এমন আশা করি। অন্যদের কাজের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমাকে আরও ভালো একটা জায়গায় পৌঁছাতে হবে।  আমি চাই দেশের কাজ করার পরে দেশের বাইরেও কাজ করার সুযোগ আছে। আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করতে হলে আমরা যেটা করতে পারি তাহলো- যত বেশি আমরা পোশাক রপ্তানি করতে পারবো, তত বেশি অর্থ বাইরের দেশ থেকে আমরা নিয়ে আসতে পারি। অর্থনীতির জন্য, আমাদের দেশের জন্য এবং আমরা নিজেদের জন্য যদি দেশের বাইরে কাজ করতে পারি বা সুযোগ হয় সেটা করবো।”

সাদিয়া খান বলেন, “আগে আমার কাছে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে শুরু করে ১৫০০, ২০০০, ২৫০০ টাকার পর্যন্ত শাড়ি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সবকিছু জিনিসের দাম বাড়ায় ইচ্ছের বিরুদ্ধেই দাম বাড়াতে হচ্ছে। এখন ৪ হাজারের নিচে শাড়ি দিলে লোকসান গুণতে হবে। ডলার সংকট, এলসি বন্ধ, নানা কারণে কাঁচা মালের দাম বেড়েছে। একইসাথে তাঁতিদের খরচও বেড়েছে।”

Link copied!