• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নগরজুড়ে পিঠা খাওয়ার ধুম


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩, ১০:০৩ পিএম
নগরজুড়ে পিঠা খাওয়ার ধুম
পিঠা খাচ্ছেন সাধারণ লোকজন। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠা। শীতের সকাল, বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় এর থেকে লোভনীয় খাবার আর কি বা হতে পারে। আয়োজন খুব সামান্য, উপকরণও হাতে গুণে খুব বেশি নয়। অথচ স্বাদে মানে তা অতুলনীয়। শীতের দিন পিঠা খাওয়া গ্রামের পরিচিত দৃশ্য হলেও বর্তমান এটি রাজধানীতেও সাড়া ফেলেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গুড়, নারকেল ও চালের গুড়া দিয়ে ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা তৈরি হয়। চিতই পিঠার সঙ্গে দেওয়া হয় সরিষা ভর্তা, চ্যাপা বা শুঁটকি, ইলিশ, ডাল, ধনে পাতার ভর্তাসহ রকমারি ভর্তা।

ভোর, বিকেল বা সন্ধ্যায় সাধারণ মানুষ ভিড় করেন এসব পিঠার দোকানে। দোকানগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখলেই বোঝা যায় শীতের পিঠার কদর। চুলা থেকে দোকানি পিঠা নামানোর সঙ্গে সঙ্গেই হাতে তুলে নেওয়ার নিশ্চুপ প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায় ক্রেতাদের মধ্যে।

অফিস শেষে কারওয়ান বাজারের পিঠার দোকানে পিঠা খেতে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী মো. আয়নাল হক। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “প্রায়ই অফিস শেষ করে পিঠা খেতে আসি। শীত ছাড়া পিঠার তেমন কোনো আমেজ থাকে না। শীত মানেই পিঠার উৎসব।”

আয়নাল হক আরও বলেন, “বিভিন্ন ধরনের পিঠা আছে। সবচেয়ে চিতই আর ভাপা পিঠা মজাদার। পিঠা পেটের চাহিদা না মেটালেও মনের চাহিদা ঠিকই মেটায়।”

শুধু কারওয়ান বাজারই নয়, শীতে পিঠার দোকানে ছেয়ে গেছে রাজধানীর অলিগলি। এমন কোনো পাড়া-মহল্লা বা অলিগলি নেই যেখানে বসেনি পিঠার দোকান। যদিও এসব অস্থায়ী পিঠার দোকান। বিশেষ করে দুপুরের পর বিকেল থেকে শুরু হয় পিঠার দোকানের কার্যক্রম।

পিঠার দোকান। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

রাজধানীর প্রায় পিঠার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা হয়। এসব দোকানে মাটির চুলায় কিংবা গ্যাস বা কেরোসিনের চুলায় বানানো হয় পিঠা। অন্য যেকোনো পিঠা থেকে গরম চিতই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। গত এক-দুই বছর আগেও এই পিঠা ৫ টাকা দাম থাকলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ছোঁয়ায় এখন দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ টাকায়।

নাঈম নামের এক পিঠা ক্রেতা বলেন, “শীতে পিঠা খাওয়ার ঐতিহ্য আছে আমাদের মতো গ্রাম থেকে আসা মানুষদের মধ্যে। এখন শীত শীত ভাব আসায় গরম গরম পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন যাওয়া হয়। আর এ কারণেই দেখেছি রাজধানীর এমন কোনো এলাকা নেই, অলিগলি নেই যেখানে শীতের পিঠার অস্থায়ী দোকান বসেনি। বিশেষ করে চিতই পিঠার দোকান সব জায়গাতেই আছে। প্রতিদিনই সন্ধ্যায় পিঠা খাই রাস্তাঘাটে। আমার মতো অসংখ্য মানুষ আছে যারা বলতে গেলে প্রতিদিন এই পিঠা দিয়ে নাস্তা খায়।”

পিঠার মূল আকর্ষণ বিভিন্ন পদের ভর্তা। যে দোকানে যত বেশি আর স্বাদের ভর্তা পাওয়া যায়, সে দোকানেই তত বেশি পিঠা বিক্রি হয় বলে জানান কারওয়ান বাজারের রফিক নামের এক পিঠা বিক্রেতা।

রফিক বলেন, “ভর্তা বেশি থাকলে মানুষ বেশি আসে। আর মানুষ বেশি এলে বেচাকেনাও ভালো হয়। একটা পিঠা নিয়ে কয়েক পদের ভর্তা নিয়ে খেয়ে চলে যায়। সাধারণ যে পরিমাণ ক্রেতা আসে তাতে আলহামদুলিল্লাহ বেচাকেনা ভালো হয়। দৈনিক আমি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করতে পারি। যা দিয়ে মোটামুটি সংসার চালাতে পারি।”

পিঠা বানাতে ব্যস্ত দোকানি। ছবি : সংবাদ প্রকাশ

রফিক আরও বলেন, “আগের থেকে মানুষ এখন কমে গেছে। আগে যেখানে সারা দিন পিঠা বিক্রি করতাম ৫ হাজার টাকার। সেখানে এখন ৩ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করতে পারি। তবে মানুষের পকেটে টাকা নেই। টাকা না থাকলে মানুষ কীভাবে খরচ করবে। সামনে নির্বাচন আসছে। হরতাল-অবরোধে মানুষ আরও কমে গেছে।”

Link copied!