• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম বাড়বে কেন’


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২, ০৪:০৫ পিএম
‘বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম বাড়বে কেন’

বাজারে সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির ডিমের দাম ডজনে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে সবজির দাম। বাজারে ৬০ টাকা কেজির নিচে পেঁপে আর কাঁচকলা ছাড়া কোনো সবজিই মিলছে না। তবে, সবজির সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। বাড়তি দামে সবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজারে এসে অল্প পরিমাণে সবজি কিনে বাসায় ফিরছেন তারা।

গত বছরের এপ্রিল থেকে বেড়েই চলছে সবজিসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। যা এখনো বিদ্যমান। বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ ও মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠছেন সাধারণ লোকজন।

কিছুদিন আগে মরিচ ২০০ টাকা কেজি প্রযর্ন্ত বিক্রি হয়েছিল। যা বর্তমানে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানিতে শুল্কের পরিমাণ কমিয়েছে সরকার। এতে চালের বাজার কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আসলেও সবজির বাজারে এখনো স্বস্তি ফেরেনি।

বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ সবজির দামই বেড়েছে। কাঁচা মরিচের দাম কমলেও কমেনি গাজর ও টমেটোর দাম। টমেটো ১২০ ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এতে সবজির বাজারে ক্রেতাদের মুখে অসন্তোষ প্রকাশ দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, “সবজির দাম বাড়ার স্পষ্ট কারণ আমাদের জানা নেই। অধিকাংশ সবজির দামই গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু কিছুদিন আগেও বৃষ্টির কারণে সবজির দাম অনেকটাই চড়া হয়েছিল, যার প্রভাব এখনো রয়েছে।”

সবজি ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকেরা বারবার ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। যার কারণে শীতের এই ভরা মৌসুমে দাম সহনীয় পর্যায়ে আসেনি।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন মৌসুম অনুযায়ী এখনো সবজির দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

সবজির দাম কেমন জানতে চাইলে তেজগাঁও থেকে বাজার করতে আসা জাকির হোসেন বলেন, “সবজির দাম অন্যান্যবারের চেয়ে এবার একটু বেশি। বৃষ্টি অজুহাত দেখিয়ে সবজির দাম বাড়বে কেন? সবজির দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকার অথবা ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো হাত নেই। এ জন্য আমরাই দায়ী। কারণ প্রতিদিন আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি। যেহেতু প্রকৃতিকে আমরা আঘাত করছি। প্রকৃতিও আমাদের ওপর পাল্টা আঘাত করছে।”

জাকির হোসেনের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন কয়েকজন সবজি ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে শীতকালীন কিছু সবজি ভরপুর। কিন্তু দাম আকাশচুম্বী। শুধু মূলা আর পেঁপে বাদে সব ধরনের সবজি ৫০ টাকা ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁরস ৫০, বেগুন ৪০, ঝিঙ্গা ৫০, চিচিঙ্গা ৫০, বরবটি ৫০, ফুলকপি প্রতি পিস ৩০, বাঁধা কপি ৩০, শসা ৫০-৬০, টমেটো ১২০, পেঁপে ২০-৩০, কচুর মুখী ৩৫-৪০, ধনেপাতা ১৬০, রসুন আমদানি করা ও দেশি দুটোই বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি এবং আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।

সবজি বিক্রেতা তাপস চন্দ্র সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বেগুন গত সপ্তাহে কিনেছি ৬৫ টাকায়। আজ তা কিনতে হয়েছে ৭৫ টাকায়। বিক্রি তো ৮০ টাকার নিচে করা যাচ্ছে না। গোল বেগুন ৯০, লম্বা বেগুন ৮০ টাকায় বেঁচতে হচ্ছে।”

আকরাম নামের একজন ক্রেতা বলেন, “সবজির দাম বাড়তে সময় লাগে না, কিন্তু বেড়ে গেলে তা সহজে কমে না। বৃষ্টির অযুহাত দেখিয়ে সবজির দাম বৃদ্ধি হবে কেন? আমাদের মতো মধ্যবিত্তের ৬ সদস্যের পরিবারের জন্য সবজির জন্য খরচ বেড়ে গেছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।”

এই দিকে বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে শাকের দামও বেড়েছে। পাটশাকের জোড়া আঁটি ২৫ টাকা, কলমিশাক  জোড়া আঁটি ২০ টাকা, কচুর শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, মুলার শাক দুই আঁটি ৩০ টাকা, লালশাকের জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, শাপলা ডাঁটা ১০ টাকা। আর ধনিয়ার পাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। লেবুর হালি কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের পছন্দের লাউয়ের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা। জালি কুমড়া ৩০-৪০ টাকা পিস।

সবজি বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “টমেটো ও গাজরের দাম শুনে অনেক ক্রেতা ফিরে যাচ্ছেন। গাজর বর্তমানে চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে তাই গাজরের দাম একটু বেশি রাখা হচ্ছে। যারা কিনছেন তারাও অল্প করে কিনছেন। গাজর ও টমেটো বাজারে নেই। হাইব্রিড দুই সবজি আমদানি করায় খরচ বেশি।”

বাজার করতে আসা জাকির মিয়া বলেন, “সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে কেবল কিছু শাক ও পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া আর মরিচ। লাউয়ের দামও বাড়তি। আলুও ৩০ টাকা। বাকি সবই ৬০ টাকার ওপরে। ২০০ টাকার সবজি কিনলে দুই দিন যায় না। ফিরতে হয় ফের সবজির বাজারে।”

সবজি বিক্রেতা নূর হোসেন বলেন, “সবজির বাজারে কোনো সরকারি মনিটরিং নেই। যে যেমন পারছেন, দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। আমরা খুচরা বেঁচি। পাইকারিতেই যদি বাড়তি দাম কিনতে হয়, তাহলে তো লোকসান করে খুচরায় সবজি বিক্রি করা যায় না।”

বাজারে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। ৪০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭০০ টাকায়। প্রতি কেজি কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪০, তেলাপিয়া ১৬০-১৮০, রকমভেদে চিংড়ি ৭৫০-১০০০, ট্যাংরা ৫৫০ টাকায়।

মাছের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খাসির মাংসের দাম। শীতকালে বিবাহ ও অন্যান্যা সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি হওয়ায় এই বাজারে প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কিছুদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকায়। খাসির মাংসের দাম বাড়লেও গরুর মাংস আগের দাম ৭০০ টাকা কেজিতেই বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!