• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

গ্যাং কিলিংয়ের বিরুদ্ধে কে প্রতিরোধ করবে, প্রশ্ন আনু মুহাম্মদের


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪, ০৯:৫৩ এএম
গ্যাং কিলিংয়ের বিরুদ্ধে কে প্রতিরোধ করবে,  প্রশ্ন আনু মুহাম্মদের

অর্থনীতিবিদ ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ছাত্ররাজনীতি বাংলাদেশের অস্তিত্বের অংশ। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো সন্ত্রাস করেছে। কিন্তু এসব দখলদারী ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধেও অনেক ছাত্র সংগঠন লড়াই করেছে। অনেক ছাত্র সংগঠন ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছে। কিন্তু তারাই যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তাহলে সক্রিয় হবে কারা? যারা এখন সন্ত্রাস করছে, গ্যাং কিলিং করছে তাদের বিরুদ্ধে কে প্রতিরোধ তৈরি করবে? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্ত্রাস ও দখলদারত্ব নিষিদ্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে ছাত্র রাজনীতি সক্রিয় রাখতে হবে।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি’ আয়োজিত জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের দাবিতে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “সরকার সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তা নয়। তবে সরকার সমাধানের একটা ভিত্তি করতে পারে। সরকারকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। নিহত ও আহতদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। একটা সংবিধান কমিটি হয়েছে। এদেশের সংবিধানে স্বৈরতন্ত্রী, ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণ এবং যেসব বৈষম্যমূলক বিধিব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো পরিবর্তন করে জনমতের ভিত্তিতে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান করতে হবে। সরকারের আশু দায়িত্ব হিসেবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” 

শ্রমিকদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না হলেও বাঁচার মতো একটা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে বলেও তিনি দাবি জানান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বলেন, “বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বিগত সরকার রামপাল ও রূপপুরের মতো যেসব ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই প্রকল্পগুলো বন্ধ করতে হবে। সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা, সরকারি আমলা থেকে শুরু করে সবাইকে পাবলিক হাসপাতালে চিকিৎসা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাহাড়ের সকল জাতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। পাহাড়ে গত দুই দিনের হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কোনো জায়গাতেই জবরদস্তিমূলক শাসন করা যাবে না। দেশের স্বার্থবিরোধী যা যা চুক্তি আছে, সব বাতিল করতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ড কোনো দুর্ঘটনা মনে হয় না উল্লেখ করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, বরং এর পেছনে একটা ছক আছে। হত্যার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট থেকে ঘোষণা করা হলো যে, ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের রাজনীতি চলবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফল কী এটা হতে পারে? যুক্তি দেওয়া হয় যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার একটা দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা। জবরদখল করে অছাত্রদের রাজনীতি বন্ধ করার কথা। কিন্তু একটা ছুঁতো দিয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত হলো। ছাত্ররাজনীতি না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। ছাত্ররাজনীতি না হলে এই জুলাই গণঅভ্যুত্থান সফল হতো না। আন্দোলনের দুই মাস পার না হতেই আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা শুরু হয়ে গেছে।

কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ড. হারুন-উর-রশীদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা  প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে পাহাড়ে সেনা প্রত্যাহার ও ছাত্ররাজনীতির বন্ধের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্ত্বর প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।

Link copied!