এরশাদ শিকদারের কথা মনে আছে, ৬০টির বেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। মূর্তিমান এক আতঙ্ক ছিলেন এরশাদ শিকদার। তবে ২৪ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তার দেহরক্ষী নুরে আলম। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এরশাদ শিকদারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এরশাদ শিকদারের বিচারের প্রতি সারা দেশের মানুষের আগ্রহ ছিল, গণমাধ্যমেরও আগ্রহ ছিল। এই কারণে সেই সময় প্রতিটি সংবাদমাধ্যমে এটি গুরুত্বের সঙ্গে ফলোআপ করা হতো। আর যেদিন মৃত্যুদণ্ড হলো, সেদিন সব কাগজের প্রধান শিরোনাম ছিল সেই ফাঁসির খবরটি।
এবার খবরের শিরোনাম হলো ‘কসাই জিহাদ’। ২০ বছর পর আরেক নৃশংসতার ঘটনা শুনে গা শিউরে ওঠে। এই কুশীলবের নাম জিহাদ হাওলাদার, যিনি জিহাদ কসাই নামে পরিচিত। এত দিন মানুষ কসাই বলতে গরু-ছাগলের মাংস বানানোকে বুঝত। আর কসাই জিহাদ মানুষের শরীরকে টুকরা টুকরা করে কিমা বানালেন।
পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে খুন করে দেহ টুকরা টুকরা করে ফেলা হয় এই কসাই জিহাদের সাহায্যে। প্রমাণ লোপাট করতে কুচি কুচি করে দেহ কেটে তা কিমা বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
শুধু তা-ই নয়, প্রমাণ লোপাটের জন্য শরীর থেকে তুলে ফেলা হয়েছিল চামড়াও। হাড় আলাদা করে টুকরা টুকরা করে ফেলা হয় দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছেন, আখতারুজ্জামানের শাহীনের নির্দেশে তিনিসহ চারজন মিলে এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
এরপর তারপর ওই ফ্ল্যাটের মধ্যেই পুরো শরীর থেকে সব মাংস আলাদা করে জিহাদ কিমা করে, তারপর তা কিছু পলিথিনে রেখে দেন। হাড়গুলোকেও ছোট ছোট টুকরা করে প্যাকেট করা হয়। পরে সেসব প্যাকেট ফ্ল্যাট থেকে বের করে বিভিন্ন গাড়ি ব্যবহার করে কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ভোরে সিআইডি ও পুলিশ আটক করে জিহাদসহ ট্যাক্সি ক্যাব চালককে। তারা জানায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটি এলাকার একটি খালে মরদেহের কিছু অংশ ফেলা হয়েছে। মরদেহ কিমা ও হাড়গুলো ছোট ছোট টুকরা করায় সব অংশ উদ্ধার একেবারেই অসম্ভব।
কলকাতার পুলিশ জানিয়েছে, এমপি আনার খুনে গ্রেপ্তার সিয়ামই কসাই জিহাদ। তার প্রকৃত নাম জিহাদ হাওলাদার। তিনি পেশায় কসাই। বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য নিজের নাম সিয়াম বলা শুরু করে জিহাদ। ২৪ বছরের জিহাদের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায়। কয়েক বছর ধরে মুম্বাইয়ে থাকতেন জিহাদ।
আর এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার বাবা ছিলেন বন্দে আলী শিকদার। আট ভাইবোনের মধ্যে এরশাদ শিকদার ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৬৭ সালে জন্মস্থান নলছিটি ছেড়ে খুলনায় চলে আসেন। ঘাঁটি গাড়েন ৫ নম্বর ঘাট এলাকায়। আশির দশকে নিয়ন্ত্রণ নেন রেলস্টেশন, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকার। এরপর তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়।