পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা দেশের জনগণই ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে মূলত এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে খুবই সফল ও ঐতিহাসিক অভিহিত করেছেন প্রেস সচিব।
এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, “কত দিন পরে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে, ১৬ মাস না ১৮ মাস পরে, এটা ঠিক করবে দেশের জনগণ। সেনাপ্রধান সময়সীমা নিয়ে মতামত দিয়েছেন মাত্র।”
প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘের সফর সফল হয়েছে বলেও জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, “এ সময় বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র প্রধান ও আর্থিক সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টার ফলপ্রসূ বৈঠক হয়। সবাই সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন।”
কমিশনের কাজের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “কমিশনের কাজ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) থেকে শুরু করার কথা। কিন্তু একটি সিদ্ধান্ত এসেছে তার আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ আরেক দফা আলোচনা করতে চাচ্ছেন।”
শফিকুল আলম বলেন, “কমিটির প্রধানদের যখন নাম ঘোষণা হয়েছে, তখন কমিশনের কাজ কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে। যেহেতু এখানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অংশীজন। তাই তাদের সঙ্গে আলাপ করে মতামত চাওয়া হবে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “এটুকু বলতে পারি, এই আলোচনাটি খুব তাড়াতাড়ি হবে। আলোচনা হওয়ার পরই দেখবেন কমিশনের কাজগুলো শুরু হয়েছে।”
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান, যা কিছুই ঘটুক না কেন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যেন নির্বাচন হতে পারে সেজন্য সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
সেনাপ্রধান আরও জানান, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
বিরল ওই সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেন, “যাই হোক না কেন, আমি তার ( ড. ইউনূস) পাশে আছি। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।”
সেনাপ্রধানের ওই বক্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হলেও পরে তা পরিবর্তন করে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে কমিশনের কাজ শুরুর করার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত ছয় সংস্কার কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। সরকারের চাওয়া হলো, কাজ শেষে কমিশনগুলো আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।