• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কী ঘটবে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৪, ০৯:৫২ পিএম
কী ঘটবে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে
বাংলাদেশ-ভারতের জাতীয় পতাকা। ফাইল ফটো

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন প্রভাব সরাসরি পড়বে দুই দেশের বাণিজ্যের ওপর। আমদানি, রপ্তানি ছাড়াও বহুমুখী বাণিজ্যের উন্মুক্ত জানালা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন ভাষ্য ভারতীয় অনেক গণমাধ্যমের। তবে সম্প্রতি ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বড় প্রভাব ফেলবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি—যেমন জাপান, জার্মানি বা ফ্রান্সে সে পরিমাণ রপ্তানি করেনি। কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশে যে সামাজিক-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা চলছে, তার প্রভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

মূলত, গত এক দশকে বাংলাদেশের যে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার বদৌলতে বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম অংশীদার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম। পরিবর্তিত বাস্তবতায় ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন ভারতের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বড় অর্জন ছিল গত এক দশকের বেশি সময় ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। এ সময় বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি তিন গুণেরও বেশি হয়েছে।

২০০৯ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ৮৪১ ডলার; ২০২৪ সালে যা ২ হাজার ৬৫০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হাত ধরে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন আয়ের কাতার থেকে বেরিয়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়। এ সময় দারিদ্র্য কমেছে। বিভিন্ন সামাজিক সূচকে উন্নতি হয়েছে।

বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বেড়েছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের আমদানিও বেড়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অনেকটাই বেড়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা।

প্রকৃতপক্ষে ভারত–বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য যে হারে বেড়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সেই হারে বাড়েনি। ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে এসে ভারতের বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য আড়াই গুণ বেড়েছে। কিন্তু একই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্য বেড়েছে সাড়ে পাঁচ গুণ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ভারতের দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৪০ কোটি ডলার; ২০২৩ সালে যা ১ হাজার ৩১০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।

এই সময় বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভারতের রপ্তানি যে হারে বেড়েছে, বাংলাদেশে তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। ২০০৯ সালে ভারতের পণ্য বাণিজ্যের ১ দশমিক ২ শতাংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ; ২০২৩ সালে যা ২ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে ভারতের মোট রপ্তানির ১ দশমিক ২ শতাংশ গেছে জাপানে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ, ফ্রান্সে ১ দশমিক ৭ শতাংশ ও জার্মানিতে গেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি ২০২১ সালে রেকর্ড ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়, যদিও এর পরের দুই বছরে সেটা কমেছে। ২০২২ সালে এই রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার এবং ২০২৩ সালে তা আরও কমে এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারে নেমে আসে। বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ অবশ্য চাহিদা কমে যাওয়া। ২০২১ সালের পর উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি সীমিত করার সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি কমেছে।

ইকোনমিক টাইমস বলছে, ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি কমলে সুতা সবচেয়ে বেশি মার খাবে। ভারতের বৈশ্বিক সুতা রপ্তানির ৩৫ শতাংশ বাংলাদেশে যায়। এতে ভারতের চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এতে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে সুতার দাম কমতে পারে। তাতে ভারতের তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চলমান আর্থ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি আরও আক্রান্ত হবে এবং তাতে ভারত থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির চাহিদা কমবে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভারতের ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ নিতে পারবেন বলে মনে হয় না। কারণ, তাদের সেই সক্ষমতা নেই।

সূত্র : প্রথম আলো।

Link copied!