কলকাতায় পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। সেই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী এমপি আজিমের ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীন।
তবে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে শিলাস্তি রহমান নামে এক তরুণী উঠে এসেছেন আলোচনায়। কলকাতার নিউটাউনে যেখানে খুন হন এমপি আজিম সেই সঞ্জিভা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে শিলাস্তি রহমানের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল।
গোয়েন্দা তথ্যমতে, শিলাস্তি রহমান আজিম হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবি। অথচ ঘটনার আগে ১০ মে শাহীন কলকাতা থেকে দেশে ফিরলেও শিলাস্তি থেকে গিয়েছিলেন কলকাতায়। হত্যা মিশন শেষ করে গত ১৫ মে মূল কিলার আমানুল্লাহর সঙ্গে ঢাকায় ফিরে আসেন শিলাস্তি।
ধারণা করা হচ্ছে, এমপি হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে জড়িত আছেন শিলাস্তি রহমান নামের তরুণী। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিলিং মিশনে ‘হানি ট্র্যাপ’ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে তাকে। এরই মধ্যে শিলাস্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
কে এই শিলাস্তি রহমান
এখন অবধি আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবি হিসেবে পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে শিলাস্তি রহমানের। তবে কতদিন ধরে শাহীনের বান্ধবী, কীভাবে ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যাচ্ছে না।
গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, স্বর্ণ চোরাচালানের আন্তর্দেশীয় চক্রের দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে এমপি আজিমকে ভারতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য পাতা হয়েছিল তরুণীর ফাঁদ। এখান থেকে প্রশ্ন উঠেছে, শিলাস্তি রহমান স্বর্ণ চোরাচালান কিংবা আন্তর্দেশীয় কোনো চক্রের সদস্য? দেশে-বিদেশে বড় কোনো চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তার?
এসব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর এখনও কারো জানা নেই। তবে গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সব উত্তর বের হয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, হত্যাকাণ্ডে শিলাস্তির জড়িত থাকা মূল পরিকল্পনারই অংশ।
কলকাতার একটি সূত্র জানাচ্ছে, সঞ্জিভা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে ১৩ মে এমপি আজিমকে খুনের আগে সেখানে দুইজন পুরুষ ও একজন নারীকে ঢুকতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এমপি আজিম ও মূল হত্যাকারী আমানুল্লাহের সঙ্গে শিলাস্তি রহমান সেখানে ঢুকেছেন। ফ্ল্যাটে একদিন অবস্থানের পর একজন পুরুষ ও এক নারী সেখান থেকে বের হন। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের পর ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে আসা সেই তরুণী শিলাস্তি রহমান।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা একটি জাতীয় দৈনিককে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের সময় শিলাস্তি রহমান সঞ্জিভা গার্ডেনের সেই ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাটের একটি তলায় অবস্থান করছিলেন। সামনে ছিলেন না তিনি। মিশন শেষ হলে নিচে নেমে আসেন। এরপর লাশ গুমে সহায়তা করেন। গোয়েন্দা সূত্রমতে, মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি মিলেই টুকরো করা মরদেহের একটি ট্রলি নিয়ে প্রথমে বের হয়েছিলেন।
তদন্ত সংশিষ্টরা বলছেন, সঞ্জিভা গার্ডেনের ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে কলকাতা পুলিশ। সেসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আমানুল্লাহসহ তার সহযোগীদের ট্রলিব্যাগ আনা-নেওয়া, এমপি আজিমের বাইরে রাখা জুতা ভেতরে নেওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। এছাড়া শিলাস্তি রহমানকে বাইরে থেকে পলিথিন ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে আসার দৃশ্যও ফুটেজে পাওয়া গেছে।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিলাস্তি রহমান পুরো ঘটনার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তবে তার এই অপরাধ সংশ্লিষ্টতার আগের কোনো ইতিহাস এখনও জানা যায়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সঙ্গে তার গভীর কোনো যোগাযোগ আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসঙ্গত, এমপি আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে ভারতের কলকাতায় গিয়ে তার ২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন সন্ধ্যা ৭টার দিকে। পরদিন ১৩ মে বেলা ২টার দিকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপালের বাসা থেকে বের হন। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার কথা বলে যান।
তবে সেদিন থেকে বাসায় না ফেরায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস। এরপর ২২ মে এমপি আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশিরাই হত্যা করেছে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।