বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় দুইদিন পর পশ্চিমা পরাশক্তির দেশ দুটি এ নিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের মতে, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড` মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টেমন্ট তাদের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। একই দিনে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)ও পৃথক বিবৃতি দেয়।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টেমন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কার্যালয় থেকে ইস্যু করা বিবৃতির শিরোনাম ছিল ‘পার্লামেন্টারি ইলেকশনস ইন বাংলাদেশ’। প্রায় একই বক্তব্য নিয়ে মি. মিলার সামাজিক মাধ্যম এক্সেও (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং তাদের গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে।
তবে, হাজারো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। সেই সঙ্গে, বাংলাদেশের এই নির্বাচন সুষ্ঠ ও অবাধ হয়নি বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচনের সময় এবং এর আগের মাসগুলোতে বাংলাদেশে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। সহিংসতার ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে সব দলের প্রতি সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
তবে, সামনের দিনে, বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত -প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গঠন, মানবাধিকার এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানানো হয়।
এদিকে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) বা দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি। নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের বহু সংখ্যক কর্মীর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে নির্বাচনের প্রচারণার সময় সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের হাতে ভোট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিকল্প ছিল না বলে মতামত দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
তবে, যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, একটি টেকসই রাজনৈতিক সমঝোতা ও সক্রিয় নাগরিক সমাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি নিজেদের মতপার্থক্য দূর করে রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। আর এ প্রক্রিয়ায় সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।