এখন আর সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ব্যবসায়ীদেরকে পিচ্ছিল বাইন মাছের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, বাড়তি মুনাফার চেষ্টা করা একশ্রেণির ব্যবসায়ীর স্বভাব হয়ে গেছে। তারা সব সময় এমন চেষ্টা করেন। তারা ইল মাছের (বাইনজাতীয় মাছ) মতো পিচ্ছিল, ধরা কঠিন। তবে এখন থেকে তাদের ধরা সম্ভব হবে।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে পোলট্রি খাতের ব্যবসায়ীদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এ সময় বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রেয়াজুল হকসহ পোলট্রি খাতের ব্যবসায়ীরা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বন্যার কারণে দেশে ডিম ও মুরগির উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে এ উৎপাদন শিগগির স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ডিম ও মুরগির দামে বেশি ব্যবধান থাকবে না বলে তিনি আশাবাদী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এসব পণ্যের দাম কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উৎপাদনকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে উৎপাদন খরচের বাইরে অস্বাভাবিক মুনাফা করা যাবে না। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশন বিষয়টা দেখবে। ব্যবসায়ীদের উজ্জীবিত না করা না গেলে সত্যিকারের উন্নয়ন হবে না।
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। একবার দাম উঠলে আর নামে না, সেটা হবে না। বেশি সমস্যা হলে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে সেটি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর করবে। ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে এখন তেলের দাম কমেছে। ফলে পরিবহন খরচ কমে যাবে।
পণ্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এখনকার পণ্যমূল্য যে খুব খারাপ তা বলা যাবে না। সন্তোষজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। আরও সুখকর করা যায় কি না, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।
উৎপাদক পর্যায়ে ১৮৫ টাকার সোনালি মুরগি ঢাকায় ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, উৎপাদনকারীরা বলেছেন যে তারা উৎপাদন বাড়াবেন। বিপণনেরও কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে পণ্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “এখন যে পণ্যমূল্য, তা খুব যে খারাপ সেটা বলা যাবে না। মোটামুটি সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। এটাকে আরও সুখকর করা যায় কিনা সে চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ব্যবসায়ীদের উজ্জীবিত না করতে পারলে সত্যিকারের উন্নয়ন হবে না বলেও মন্তব্য করেন সালেহ উদ্দিন। বলেন, “সে জন্য আমার প্রায় সব খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলছি। এর মধ্যে আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, বিশেষ করে পোলট্রিখাতের ডিম মুরগি ও এর বাচ্চার দাম কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা জানিয়েছেন পোলট্রি উৎপাদন পর্যায়ে কিছুটা সমস্যা আছে। তারপর বড় উৎপাদনকারীরা বলেছেন তারা উৎপাদন এখন বাড়াবেন।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “উৎপাদক ও ভোক্তা পর্যায়ে এসব পণ্যের দাম কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
বিপণন পর্যায়ে উৎপাদন খরচের বাহিরে অস্বাভাবিক মুনাফা করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “উৎপাদনকারী ও ভোক্তার মধ্যে দামের বিরাট ব্যবধান থাকবে না।"