নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। অসাধু ব্যবসায়ীদের বেশি লাভ ও লোভের কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো জিনিসের দাম বাড়ছে। আয় না বেড়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারে গিয়ে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়ার বিষয় জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইফুল ইসলাম পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাজধানীর বাড্ডায়। বেতনের টাকায় সংসার চালানো তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। তার প্রত্যাশা, তাদের মতো মানুষদের কথা বিবেচনা করে যেন বাজেট ঘোষণা করা হয়।
সাইফুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাজারে মনে হয় আগুন লেগেছে। আমাদের আয় বাড়ছে না, অথচ ব্যয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিষয়টা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা দেখি না। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে বাজার। সিন্ডিকেট ধরতে কোনো উদ্যোগ বা সফলতা নেই। আমরা চাই, এবারের বাজেটে যেন সাধারণ মানুষের কেনাকাটার সামর্থের কথা ভাবা হয়। সে বিষয়ে সরকার যেন জোরদার পদক্ষেপ নিতে পারে।”
বাজেট বিষয়ে কোনো ধারণা নেই রিকশাচালক আইয়ুব আলীর। তবে তিনি জেনেছেন বাজেটে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে আর কমে। আইয়ুব বলেন, “শুনেছি বাজেট ঘোষণার পর থেকেই সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, এবারের বাজেটে যেন জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো না হয়। সরকার যেন সেদিকে বেশি খেয়াল রাখে।”
বাজেট নিয়ে মাথা ব্যথা নেই আরেক রিকশাচালক সালমানের। তার সোজা জবাব, “বাজেট দিয়ে কী করবো? আমরা চাই দেশ ভালো থাকুক। সব জিনিসের দাম যেন কমে। আমরা যাতে ভালোভাবে জীবন চালাতে পারি।”
চাকরিজীবী শফিক রহমানসহ আরও তিনজন বসে বনানী সুপার মার্কেটের পাশে চা খাচ্ছিলেন। গল্পের এক ফাঁকে হঠাৎই এবারের বাজেট নিয়ে কথা উঠল। অর্থনীতির সংকটময় এই সময়ে প্রায় আট লাখ টাকার বাজেট নিয়ে তারা আক্ষেপ প্রকাশ করলেন। কর-ভ্যাটের বোঝার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
বাজেটে কী চান? এমন প্রশ্নের জবাবে শফিক রহমান বলেন, “বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ এবার বেশি হওয়ার পরও দেখবেন সরকারি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা মিলছে না। তাহলে বরাদ্দ বেশি দিয়ে লাভ কী?
এবার শফিক রহমানের সঙ্গে থাকা একজন বললেন, “শিক্ষাখাতের বাজেট বরাদ্দও তো একই রকম। বরাদ্দ বেশি মান কম।” তৃতীয়জন বললেন, “নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভালো বেতনের চাকরি করেও সঞ্চয় করতে পারছি না। মাস শেষে যা আনি দশ দিনেই সব শেষ হয়ে যায়। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর জন্য বাজেটে কী ব্যবস্থা রাখা যায় সেটাই চাই।”
গল্পের এক ফাঁকে শফিক রহমান বললেন, “আমরা চাই, সাধারণ মানুষের বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট ঘোষণা করা হোক। সরকার পণ্যের ওপর ভর্তুকি বাড়ালেই জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে।”
এই ফাঁকে চায়ের দোকানি বদরুল বললেন, “বাজেটের আগে একদফা দাম বাড়বে আর বাজেটের পর দাম আর কমবে না। এটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা জিনিসপাতির দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ কোনোমতে ঢাকা শহরে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছে। আমরা চাই, বাজেটের পর যেন কোনো জিনিসের দাম না বাড়ে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আমরা বাঁচতে পারবো, না হলে ঢাকা ছেড়ে পালাতে হবে।”
মূলত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সেসব উদ্যোগের বিপরীতে শতভাগ সফলতা আসেনি। যে কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। যদিও সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ভ্যাটের হার বাড়বে।