আওয়ামী লীগ সরকার গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে রাসেলস ভাইপার সাপ থেকে দৃষ্টি সরাতেই ছাগলকাণ্ড ভাইরাল করে বলে দাবি করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান। আদালতকে তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকে ওএসডি করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তারের পর বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ৫টায় তাকে আদালতে তোলা হলে তিনি আদালতকে এসব কথা বলেন।
এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপপরিদর্শক রুবেল মিয়া মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন।
শুনানি চলাকালে মাগরিবের আজান হলে মতিউরের আইনজীবী আদালতকে বলেন, তিনি (মতিউর) রোজা ছিলেন। এ সময় আদালতের উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে পানি পান করান।
এরপর আদালত মতিউরের বক্তব্য শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কাস্টমস থাকাকালীন কাস্টমের অটোমেশন হয়। আমি আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধা নিইনি। বরং আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে ওএসডি করা হয়। আমাকে শিবির ক্যাডার হিসেবে তকমা দিয়ে প্রায় দেড় বছর ওএসডি করে রাখে সরকার। পরবর্তীতে আমি পুনরায় চাকরিতে যোগদান করি। আমার দেওয়া সিদ্ধান্তে পোশাকখাতে সরকারের ২৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। আমার এসব উদ্যোগের জন্য তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়। আমাকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়। এক পর্যায়ে আমাকে জোর করে রাজস্ব আপিলেড ট্রাইব্যুনালে বসায়। এখানে কোনো আইনজীবী বলতে পারবে না, ট্রাইব্যুনালে থাকা অবস্থায় আমি এক টাকার দুর্নীতি করেছি। ট্রাইব্যুনালের ১২ হাজার মামলা জট নিষ্পত্তি করেছি।’
মতিউর দাবি করেন, ‘ভাইরালের ব্যাপারটা মূলত তখনকার রাসেলস ভাইপার সাপ আতঙ্ক থেকে জনগণের দৃষ্টি সড়াতে ছাগলকাণ্ডে আমার পরিবারকে জড়ানো হয়। আমি ছয় বছর যাবৎ সেই ছেলের কাছ থেকে ডিটাচড্ (আলাদা) ছিলাম। এই সুযোগে সরকার গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে আমার ১৬ বছরের ছেলেকে দিয়ে নাটক মঞ্চায়ন করে।’
একপর্যায়ে কান্নারত অবস্থায় মতিউর বলেন, ‘সব কথা তো বলতে পারছি না, তবে আমার গল্প শুনলে প্রত্যেকটা হৃদয় কাঁদবে। কোনো কিছু না জেনে দয়া করে একটা ফ্যামিলিকে ধ্বংস করবেন না। ইনশা আল্লাহ আমাদের ফ্যামিলির বিরুদ্ধে মামলা টিকবে না।’
এদিকে মতিউরের রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী লায়লা কানিজকেও গ্রেপ্তার করা হয়। দুদকের মামলায় আজ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি তাঁকে সাত দিনের রিমান্ড নেওয়া আবেদনের ওপর শুনানি হবে।