• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘আমি এখনও ইলেকটেড প্রাইম মিনিস্টার’


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৬:১১ পিএম
‘আমি এখনও ইলেকটেড প্রাইম মিনিস্টার’
শেখ হাসিনার দ্বিতীয় ফোনালাপ ফাঁস। ছবি: প্রতীকী।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে ভারত চলে গেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গত ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ৪০ দিন ধরে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনার সঙ্গে তানভীর নামের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক আওয়ামী লীগ নেতার কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সেই অডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “আমি দেশের খুব কাছাকাছি আছি। অতদূরে নাই। আমি খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।”

শেখ হাসিনার ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনার সঙ্গে বেলজিয়ামে অবস্থানরত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারির আরেকটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। যেখানে শেখ হাসিনা দাবি করেন, তিনি পদত্যাগ করেননি। এখনও বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ প্রকাশের পাঠকের জন্য সর্বশেষ ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরা হলো:

শেখ হাসিনা : সে তো জবর দখল করছে। তার কোনো লিগালিটি নাই। উপদেষ্টা বলে আমাদের কোনো পদ নাই। মানুষ খুন করে মেরে, একটা সিচ্যুয়েশন তৈরি করে তারপর সে ক্ষমতায় গেল।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : জি আপা, জি আপা। এগুলো আমরা ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা : আমি তো পদত্যাগ করি নাই। আমাদের কনস্টিটিউশনের আর্টিক্যাল ৫৭ অনুযায়ী যেভাবে পদত্যাগ, আমার কিন্তু সেভাবে পদত্যাগ করা হয়নি। সে কিন্তু ৬ তারিখের জায়গায় ৫ তারিখে (লং মার্চ) নিয়ে আসলো। ৫ তারিখে নিয়ে আসার ফলে এমনভাবে চারদিকে লোক ঘেরাও...আমি দেখলাম যে, এখন যদি ফায়ার ওপেন করে আমার এখানের সিকিউরিটি... তাহলে অনেক লাশ পড়বে। লাশ ফেলে আমি ক্ষমতায় থাকতে চাই না।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : জি আপা, জি।

শেখ হাসিনা : যখন এমন সিচ্যুয়েশন হয়ে গেল যে আমার সিকিউরিটি যারা ছিল তারা বাধ্য হয়ে..তখন আমাকে সরে যেতে হলো গণভবন থেকে। যার ফলে বঙ্গভবনে গিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা আমি দেইনি। কাজেই আমার কিন্তু পদত্যাগ হয়নি। আমি এখনো বাংলাদেশের কনস্টিটিউশনাল ইলেকটেড প্রাইম মিনিস্টার।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : ইনশাআল্লাহ আপা, আপনি চলে আসবেন তো। আর বেশি দিন নাই।

শেখ হাসিনা : তারপর ফলস ছবি দেখালো আমি সই করছি। সেটা হলো আমার ভিজিটিং বুকের সই। ছবিটা ভালো করে দেখলে দেখা যাবে ওইটা একটা মোটা বই। ওরকম কোনো বইয়ে প্রাইম মিনিস্টার সই করে পদত্যাগ করেন না। আমার সেই চিঠিও কেউ দেখাতে পারছে না। গণভবনে রেখে আসছিলাম, গণভবন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে লুটপাট হয়েছে-ওগুলো সব চলে গেছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : জি আপা।

শেখ হাসিনা : যেকটা মার্ডার হইছে পুলিশের গুলিতে কিন্তু হয়নি। মুভমেন্টের ভেতরে কিলিং এজেন্ট ছিল। ওরা যে বুলেট ব্যবহার করছে..অ্যাডাইজার শওকত সাহেব আর্মির লোক..উনি নিজেই বলছেন এই বুলেট তো পুলিশের কাছে থাকে না। তার মানে সাধারণ লোকের কাছে ওই বুলেট ছিল। আজ পর্যন্ত এই বুলেট সম্পর্কে কোনো তদন্ত নেই এবং এই রাইফেল কে ব্যবহার করছে, কোনো তদন্ত নেই। এমনকি কিছু পুরুষ মানুষ বোরকা পরে ইন্ডাস্ট্রিতে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে এগুলো করেছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : জি আপা, যখন আপনি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন, আমরা খাইতেও পারিনি ঠিকমতো।

শেখ হাসিনা : আমি লাশের স্তূপ দেখতে চাইনি।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : সেটাতো আমরা সবাই জানি।

শেখ হাসিনা : তারপরও কত মানুষ মারলো। পুলিশ মারলো। আনসারদের কোনো হদিস নাই। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী, হিন্দুদের পরিবার... মেরে লাশগুম করা এবং মেয়েগুলোকে তুলে নিয়ে যাওয়া। ইডেন কলেজের একটা মেয়েকে মেরে ঝুলিয়ে রেখে বলল আত্মহত্যা করছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : জি, জি, এই তো গত দুয়েকদিন আগে। আপা আপনার অ্যাবসেন্সে দলের এখন দায়িত্বে কে বা দল কীভাবে দাঁড়াবে?

শেখ হাসিনা : এখন সবার বিরুদ্ধে মামলা। বাকি সব জেলখানায়। কেউ নাই।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : আপা, অনেকের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন করে পাওয়া যাচ্ছে না।

শেখ হাসিনা : মেরে বোধ হয় গুম করেছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : জি জি আপা, ওদের নিয়ে কোথায় কী করেছে। কারো কোনো খোঁজ নেই। অনেক চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না।

শেখ হাসিনা : পাবে কোত্থেকে? নাই তো কেউ। সব তো জেলে ঢুকাইয়া দিছে। বাকিদের যে কী করেছে, বলতে পারব না। আমার এখন তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা : হ্যাঁ আপা সবাই আপনার কথা বলে।...

প্রসঙ্গত, দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে অনেকের ফোনালাপ ফাঁস হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পর পর দুইদিন দুটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, যা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি সংবাদ প্রকাশ। তবে পাঠকদের জন্য কিছুটা সংক্ষিপ্তভাবে তা প্রকাশ করা হলো। 

Link copied!