বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে তার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে তিনি সাকিবকে নতুন দলে যোগদানের বিষয়ে উৎসাহ দেননি।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর বনানীতে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এই বিএনপি নেতা। ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনএমে যোগদান ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ছবি নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন করেন, “কী করেছি আমি? বিএনএমে যোগ দিয়েছি? দল ভেঙেছি?: তিনি বলেন, এটা তো পরিষ্কার যে তাকে নতুন দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেটা গ্রহণ করেননি। এখন অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যে বিএনএম গঠন করতে পেছন থেকে কাজ করেছেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। সাকিব আল হাসান সেই দলে যোগ দিয়েছিলেন। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সাকিবের একটি ছবিও প্রকাশিত হয়।
বিষয়টি নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। রাজনীতি অত্যন্ত নোংরা। নির্বাচনের সময় নানা কলাকৌশল হয়। যে দলই ক্ষমতায় থাকে তারা চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য কিছু লোক ভাগিয়ে এনে নিজেদের দলে বা অন্য কোনো দলে সন্নিবেশ করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে।
সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন পরিচিত কর্মকর্তা নতুন দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, তাদের বলেছি, রাজনীতিতে কোনো শর্টকাট নেই।’
দেশে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে থেকেই সরকারি দল করা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যোগাযোগ করা শুরু করে জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা দেখেছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আমার মাঝে মাঝে দ্বিমত থাকে। তারা ধরে রেখেছিল যে বিএনপি ত্যাগ করার জন্য আমি উন্মুখ।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছিলাম, আমার পক্ষে ৩২ বছর পর দলত্যাগ করা সম্ভব নয়। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নেব।’
‘সরকারি দলের চাপ বাড়তে থাকার মধ্যে’ একজন মন্ত্রী ঘোষণা দেন যে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বিএনএমে যোগ দেবেন। বিষয়টি উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘পরদিনই আমি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, বিএনপিতেই থাকব।”
সামরিক বাহিনীর তিন চারজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উদ্যোগে বিএনএম গঠিত হয় উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাই সাকিব আল হাসানকে তার কাছে নিয়ে যান। সাকিব রাজনীতিতে যোগদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি সাকিবকে বলেছি, রাজনীতি করা তোমার বিষয়। তুমি এখনো খেলাধুলা করছ, রাজনীতি করবে কি না বিবেচনা করে দেখ। আমার কাছ থেকে উৎসাহ না পেয়ে সে চলে যায়।”
বিএনএমের নিবন্ধন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার কথায় কোনো দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। আর তিনি সেটা বলেনওনি। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, কারা এসব করে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপিতে কাউন্সিল হয় না। তা নিয়ে বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু বেগম জিয়াকে নিয়ে কখনো কোনো অসৌজন্যমূলক কথা বলেননি।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা গেলে এবং তাতে অংশ নিলে বিএনপির জন্য ভালো হতো বলে আবারও উল্লেখ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে বিএনপির জন্য ফলাফল একই হতো।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধে নিজের ভূমিকা, রাজনীতি, মন্ত্রিত্ব, কারাদণ্ড ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেন দুইবারের মন্ত্রী ও ছয়বারের সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে যশোর ক্যান্টনমেন্টে তিনিই বিদ্রোহ করেছেন। আট ঘণ্টা যুদ্ধ করে বেরিয়ে এসেছেন। ওই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন।