আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিগত আয়করের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরের মতো এবারও বার্ষিক সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত শূন্য শতাংশ কর আরোপ হবে। পরবর্তী ১ লাখ টাকা বৃদ্ধিতে ৫ শতাংশ কর দিতে হবে। এরপরের ৪ লাখ বৃদ্ধিতে আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ কর ও ৫ লাখ টাকার ওপরে হলে ১৫ শতাংশ কর আরোপ হবে। এরপরের ৫ লাখ টাকার জন্য কর দিতে হবে ২০ শতাংশ।
এগুলো অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে করা হলেও, এ অর্থবছরের ব্যক্তি করের ক্ষেত্রে আরও একটি স্ল্যাব যোগ করা হয়েছে। এবার ২০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে এ স্ল্যাব যুক্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ কর আরোপ করা হবে। অবশিষ্ট টাকার ওপর করের সর্বোচ্চ হার ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে নারী করদাতা এবং ৬৫ বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৪ লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এছাড়া গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৫ লাখ টাকা। কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান/পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে; প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যেকোনো একজন এই সুবিধা ভোগ করবেন। তবে বাংলাদেশে অনিবাসী (অনিবাসী বাংলাদেশি ছাড়া) এইরূপ সকল করদাতার জন্য এই অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে আজ। প্রস্তাবিত এ বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) চেয়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য ধরা হচ্ছে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’।
এটি নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। তিনি যে বাজেট বক্তব্য দেবেন, তার শিরোনাম দিয়েছেন সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার। অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট হলেও টানা চতুর্থ মেয়াদে গঠিত বর্তমান সরকারের এটি প্রথম বাজেট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ২১তম বাজেট।
আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। পরে যদিও লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরজুড়েই মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের বেশি। এদিকে আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও পরে তা ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আজ থেকে নতুন শুল্ক আইন কার্যকর হবে। আগামী অর্থবছরে কর দেওয়া সাপেক্ষে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক বসানোর প্রস্তাব উঠতে পারে। তবে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই থাকছে।