ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব রকম চেষ্টা চালাবে সরকার এমনটাই জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার ফেরত দেবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ভারত সরকার তাকে ফেরত দিতে বাধ্য।
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড দেশে-বিদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। যে কারণে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। তবে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো নির্ভর করছে; ভারত বন্দি বিনিময় চুক্তি মানবে কি না তার ওপর।
সূত্রমতে, জুলাই-আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারাদেশে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই অভিযোগ জমা পড়েছে ৬৪টি। এরমধ্যে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া। তদন্ত করছে জাতিসংঘও।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তাকে হাজির করতে বলা হয়েছে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে। খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
এদিকে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে যে ধোঁয়াশা ছিল তাও স্পষ্ট করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল। দিল্লিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা ভারতেই রয়েছেন। রনধীর জয়সওয়াল বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে দিল্লিতেই অবস্থান করবেন শেখ হাসিনা।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম বলছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় বন্দি বিনিময় চুক্তির আলোকে ভারত তাকে ফেরত দিতে বাধ্য। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আরেক সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারত সদিচ্ছা ও বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাবে কি না- সেটিই দেখার বিষয়। ভারত যদি চুক্তিকে মান্য করে, চুক্তির প্রতি সম্মান দেখায় তাহলে আনা সম্ভব। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, আদৌ তারা সেটা দেখাবে কি না।
প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে ২০১৩ সালে বন্দি বিনিময় চুক্তি করে বাংলাদেশ। এ চুক্তির আলোকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশে আনা ও ফেরত দিয়েছে দুই দেশই।