পুনর্জন্মের বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “দমন-পীড়ন নয়, নতুন সরকার বাংলাদেশকে রক্ষা করবে। আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন, দেশের কোথাও হামলা হবে না।”
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আজকে আমাদের গৌরবের দিন। যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজকে নতুন দিনের সৃষ্টি করল, সেটাকে সামনে রেখে আরও মজবুত করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
তীব্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এ বিষয় তুলে ধরে তরুণদের প্রশংসা করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, “যে তরুণ সমাজ এটা সম্ভব করেছে, তাদের প্রতি আমার সমস্ত প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এরা এই দেশকে রক্ষা করেছে। এ দেশকে নতুনভাবে পুনর্জন্ম দিয়েছে। এই পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশ পেলাম, সে বাংলাদেশ জন্য অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলতে পারে, এটি হলো আমাদের শপথ।”
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসী কাছে আমার ওপরে বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, দেশে কারও ওপর কোনো হামলা হবে না।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এ স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের কাছে এর সুফল পৌঁছে দিতে হবে। স্বাধীনতার অর্থ হলো, দেশ তোমাদের হাতে। তোমাদের মনের মতো করে গড়তে পারো। পালটে ফেলতে পারো। পুরনোদের বাদ দাও। তোমাদের মধ্যে সৃজশীলতা আছে, তাকে কাজে লাগাও।”
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “সরকার হয়ে উঠেছিল দমনপীড়নের একটি যন্ত্র। এটা সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে মানুষ উৎফুল্ল হবে। যে সরকার মানুষকে রক্ষা করবে। সারা বাংলাদেশ একটি পরিবার।”
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। সবাইকে রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটা মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের প্রথম কাজ।”
দুপুর ২টা ১০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তাকে স্বাগত জানান গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ অন্য সমন্বয়কেরা। ড. ইউনূস বিমানবন্দরে পৌঁছার আগেই তাকে স্বাগত জানানোর জন্য সেখানে অবস্থান করছিলেন তারা।
এছাড়াও গ্রামীণ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিমান শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ব্যানার নিয়ে বিমানবন্দরে হাজির হন। তারাও তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
এর আগে বিমানবন্দরে ঢোকার সবকটি ফটকে নিরাপত্তা জোরদার করে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে ভিআইপি ফটকের সামনে ইউনূসকে স্বাগত জানাতে দুপুর পৌনে ২টায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রবেশ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বুধবার (৭ আগস্ট) ড. ইউনূস ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের চার্লস দ্য গল বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। এই সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের সদস্য ১৫ জনের মতো হতে পারে।