কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি থেকে পরে ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করেছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পতনের পর দেশের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী। তবে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতেই অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ১৩ জন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের চাওয়ার কারণে ড. ইউনূস দেশের চরম সংকট পরিস্থিতিতে গুরুত্ব দায়িত্ব নিয়েছেন। দেশে ফিরেই ড. ইউনূস বলেন, পুনর্জন্মের বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে, দমন-পীড়ন নয়, নতুন সরকার বাংলাদেশকে রক্ষা করবে।
দেশের এই সংকটকালে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন ড. ইউনূস? সাধারণ মানুষের কতটুকু আস্থা রয়েছে এই নোবেল বিজয়ীর ওপর? কী ভাবছেন রাজধানীর বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে সংবাদ প্রকাশ।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে পাওয়া এক সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. শাজাহান বলেন, ‘আমরা দেখেছি শেখ হাসিনা সরকার কীভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন এবং জুলুম করেছে। মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতো না। রাস্তায় চলতে গিয়ে অনেক সময় পুলিশের হয়রানি হতে হয়েছে। যার কারণে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মাধ্যমে ওই সরকারকে পতন ঘটিয়েছে।
শাজাহান আরও বলেন, “ড. ইউনুসকে সরকারের প্রধান করায় আমরা খুবই আনন্দিত এবং খুশি। কারণ এই মুহূর্তে ওনার মতো একজন ব্যক্তির সরকারপ্রধান হওয়া খুবই জরুরি। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি ভালো না, অর্থনীতির অবস্থা ভালো না, বাইরের রাষ্ট্রগুলোর সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ভালো না। ড. ইউনুসকে প্রধান করায় কুটনৈতিক সম্পর্ক বাড়বে, দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা তিনি ফিরিয়ে আনতে পারবেন।”
অটোরিকশা চালক আরও বলেন, “ড. ইউনূস সংকটের সময়ে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে বিশ্বাস রয়েছে। কেননা তিনি একজন নোবেল বিজয়ী শিক্ষিত এবং অর্থনীতিবিদ। আশা করছি তার হাত ধরে দেশে শান্তি ফিরে আসবে।”
এক বাইক চালক বলেন, “ড. ইউনুস একজন শিক্ষিত ব্যক্তি, ওনার দেশ বিদেশে অনেক সুনাম আছে, আমার মনে হয় ওনি ভালো কাজ করবেন, তাড়াছা ওনার অর্থ সংকট নাই যে কারও টাকা মেরে খাবে, ওনার নিজের অনেক সম্পত্তি আছে, আশা করি ওনি দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করবেন।”
রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় সেই দায়িত্ব পালন করছেন একদল শিক্ষার্থী। তাদের চাওয়াতেই ড. ইউনূসকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন। জানতে চাইলে শিক্ষার্থী ফালগুন বলেন, “ড. ইউনুস যখন দেশের জন্য কাজ করবেন তখন বুঝতে পারবো তিনি যোগ্য। আমরা চাই সুষ্ঠু একটা পরিবেশ, যেখানে কোনো বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা যেন না থাকে।”
চাকরিজীবী মারফ খান বললেন, “ড. ইউনুস বিশ্বের মধ্যে একজন সম্মানি ব্যক্তি। আমরা তাকে যথাযথ সম্মান দিতে পারিনি। এখন যেহেতু তিনি সরকার প্রধান হয়েছেন, আমরা আশাবাদী দেশ ভালো চলবে। আমরা চাই দেশে যে স্বৈরাতান্ত্রিক কাঠামো হয়ে রয়েছে সেটা ভেঙে একটা গণতান্ত্রিক সুষ্ঠু দেশ বিনির্মাণ করুক। এটাই সবার দাবি।”
জানতে চাইলে সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা রোভার স্কাউটস দলের সদস্য সাবেদ হোসেন নিলয় বলেন, “সব শিক্ষার্থীর মতামত নিয়েই আমরা ড. ইউনুসকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান করেছি। কারণ একজন শিক্ষিত মানুষই শিক্ষার মূল্য বুঝবে। মূল্যায়ন করতে পারবে। আমরা যাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি সেভাবে তিনি কাজ করবেন বলে আশাবাদী।”
নিলয় আরও বলেন, “তবে আমরা যদি দেখি আমাদের শিক্ষার মান উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ আরও এগিয়ে যাচ্ছে, তাহলে শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নয়, ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।”
ড. ইউনুস অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর স্বাগত জানিয়েছেন প্রায় সব পেশার মানুষই। সবার একটাই চাওয়া সংকট কেটে গিয়ে ভালো কিছু হোক। ফিরে আসুক শান্তি।