পবিত্র রমজান ঘিরে প্রতিবারই মাংসের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এবারও বেশ আগেভাগেই মাংসের দাম বাড়তির দিকে। গত দেড় মাস আগে যে গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল, তা এখন ৭২০-৭৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কেউ কেউ ৭৫০ টাকায়ও বিক্রি করছে। অল্প দামে বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। তাছাড়া সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তাদের ভাষ্য, কম দামে মাংস বিক্রি করে পোষাচ্ছে না। পাশাপাশি রমজান ও কোরবানিতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারিরা গরু কম বিক্রি করছেন। এতে সরবরাহ সংকটে বাজারে গরুর দাম কিছুটা বেড়েছে।
এক মাংস ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গরুর দাম বেড়েছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরুর দাম বেড়েছে বলে খামারিরা জানিয়েছেন। যদি গরুর দাম বাড়ে তাহলে মাংসের দাম কেন বাড়বে না। আমরা পাইকারিতে ৭০০ টাকায় গরুর মাংস কিনে আনছি। তাহলে লাভ করে কয় টাকা বিক্রি করব।”
ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ দিলে হয় না। বাজারে যদি তারা (সরকারের পক্ষ থেকে) আমাদের কম দামে মাংস সরবরাহ করে তাহলে আমরা কম সীমিত লাভ করে কম দামেই বিক্রি করব।”
দেখা গেছে, অধিকাংশ বিক্রেতা প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। কেউ কেউ কেজিতে ৭২০ টাকা রাখছেন। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেও গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকার মধ্যেই কিনতে পেরেছিলেন ক্রেতারা। সেই হিসাবে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ৫০ টাকা।
তথ্য বলছে, গত বছরের শেষের দিকে হঠাৎ গরুর মাংসের দাম কমতে শুরু করে। তখন ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করেন। তাতে কিছু ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন—এমন কথা তুললে ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের কেজিপ্রতি দাম নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা। ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস বিক্রি করেছেন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। নির্বাচনের পরে কোনো কারণ ছাড়াই প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকায় বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “গত বছরের শেষ দিকে গরুর দাম কিছুটা কমেছিল। তখন ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম কিছুটা কমিয়ে রাখেন। ক্রেতারাও উৎসাহ নিয়ে মাংস কিনেছিলেন। এখন রোজা ও কোরবানিতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারিরা গরু বিক্রি করতে চাইছেন না। সরবরাহ–সংকটে বাজারে গরুর দাম কিছুটা বেড়েছে। মাংসের দামেও তার প্রভাব পড়েছে।”
এদিকে হঠাৎ গরুর মাংসের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই দাম বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন তারা।
পলাশ নামের এক ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “শুক্রবার আমাদের একটা অনুষ্ঠান আছে। তাই কারওয়ান বাজারে এসেছি ৭০ কেজি মাংস কেনার জন্য। শুধু মাংস কোনো হাড্ডি থাকবে না। প্রতি কেজি মাংসের দাম রেখেছে ৯০০ টাকা। আর বাকি মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ৭৩০ টাকা পর্যন্ত।”
ওই ক্রেতা আরও বলেন, “মিরপুরে ৬৫০ টাকায় মাংস পাওয়া যায়। কারওয়ান বাজারে এসে দেখি ৭৩০ টাকা। অথচ কিছুদিন আগেও সব ব্যবসায়ীরা ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি করেছেন। যা শুরু করেছিল খলিল নামের এক ব্যবসায়ী। তখন খলিল বলেছিল ৫৯৫ টাকা মাংস বিক্রি করেও লাভ হচ্ছে তার। কিন্তু বাকি ব্যবসায়ীদের নাকি লাভ হয় না। ফলে এখানেই প্রমাণিত সিন্ডিকেটে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা সর্বদাই প্রস্তুত।”